ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চায়না জালের কারণে শুঁটকি উৎপাদনে খড়্গ

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
চায়না জালের কারণে শুঁটকি উৎপাদনে খড়্গ ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনা সুজানগর উপজেলার মসজিদ পাড়ার পৌর হাট চত্বরে চলতি বছরের শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন বিল অঞ্চল থেকে দেশি ছোট প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি করে থাকে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা।

চলতি বছরে বর্ষার পানি কম হওয়া ও বিলগুলোতে নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকারে দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে। মাছের সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদন নিয়ে বেশ চিন্তার মধ্যে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। মাছের সংকট, দাম বৃদ্ধি ও ক্ষতির কথা চিন্তা করে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন অনেকেই।

দীর্ঘদিন ধরে এ শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জড়িত এখানকার মৎস্যজীবীরা। চলতি বছরে বর্ষার সময়ে নিষিদ্ধ চায়না জালে মাছ শিকারের কারণে রেণু পোনা থেকে শুরু করে সকল প্রকারের দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে। ফলে বাজারে ব্যাপক হারে কমেছে দেশি মাছের সরবরাহ। স্বল্পতার কারণে অধিক দাম দিয়ে মাছ কিনতে হচ্ছে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের।

এছাড়া মাছ প্রক্রিয়া করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেচা-কেনা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তারা। বিগত বছরগুলিতে করোনা মহামারির কারণে মাছ বিক্রি করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। লবণের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের এখনও কোনো মাছ বাজারজাত করতে পারেনি শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. জালাল মোল্লা বলেন, বিলে চায়না, কারেন্ট ও সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে দেশি মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর এসব নিষিদ্ধ মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, মাছ সংকটের কারণে শুঁটকি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। কিভাবে সমিতি আর ব্যাংক লোন পরিশোধ করবেন সেটা নিয়েই বেশ চিন্তার মধ্যে রয়েছেন তিনি।

চালাত মালিক মাখন আলী শেখ বলেন, মাছের অভাবে এ বছর চালাত হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। মাছের সরবরাহ কম আর যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অনেক বেশি। বিগত বছরে সপ্তাহে ৭ থেকে ৮ ট্রাক শুঁটকি বিক্রি হতো। এ বছর এখনও এক ট্রাক বিক্রি করতে পারেনি আমরা।

জানা যায়, পাবনার শুঁটকি দেশের উত্তর অঞ্চল বিশেষ করে সৈয়দপুর, নীলফামারী, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দাম ও প্রকারভেদে তিন সাইজের মাছ বাজারজাত হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে ছোট আকারের শুঁটকি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে। এবার কাঁচা মাছ কিনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাক দরে। বিগত বছরে ৫ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হলেও এবার মাছ সংকটে সেটি মাত্র এক কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে মাছ সংকটের কারণে অনেকেই চাতাল তুলে নিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও মাছ সংকট; সব মিলিয়ে ব্যবসায়িক মন্দা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নূর কাজমীর জামান খান বলেন, জেলার সুজানগর উপজেলার মসজিদ পাড়া মহল্লা অন্যতম শুঁটকি উৎপাদন এলাকা হিসাবে পরিচিত। লোকবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে চায়না জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। চায়না জাল বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার প্রচারণার কাজ করতে হবে। আইন আরও কঠোর করতে হবে। তবেই হয়তো দেশি মাছ সংরক্ষণ সম্ভব হবে।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ। তবে এ বছর মাছের সরবরাহ কম থাকায় সেটি দুই মাসের বেশি চলবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাই দেশি মাছের বংশ বিস্তারসহ নিষিদ্ধ চায়না জালে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি মৎস্যজীবীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।