মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর চরমশুরা গ্রামের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ না করেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষকদের ফসলি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সফিউদ্দিন আহমেদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তর চরমশুরা গ্রামবাসী এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোহাগ ভূঁইয়া বলেন, চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরমশুরা মৌজার ম্যাপের ৫নং সীটের ১২৩ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হলেও জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির বাইরের সম্পত্তি অর্থাৎ চরমশুরা মৌজার ম্যাপের ২নং সীটের ব্যক্তি মালিকানাধীন ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৫০ কৃষকের মালিকাধীন প্রায় ৫০ একর ভূমি জেলা প্রশাসন দখল করে নেওয়া চেষ্টা করছে। সেখানে সম্প্রতি লাল নিশান টানিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড জেলায় ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে চরমশুরা মৌজার ১২৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কিন্তু গত ২১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অধিগ্রহণকৃত জায়গার বাইরের সম্পত্তি চরমশুরা মৌজার ম্যাপের ২নং সীটের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাতে সীমানা পিলার দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় গ্রামবাসী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বাধা দিতে গেলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোহাগ ভূঁইয়া আরও বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে চরমশুরা মৌজার ২ নং সীটের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে আবাদ করা কৃষি জমি দখলের কাজ করছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্নেহাশীষ দাশ, জেলা প্রশাসন অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি হুকুম দখল শাখা) রিগ্যান চাকমা এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার হুমায়ুনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
শাহাজালাল নামে এক কৃষক বলেন, প্রশাসন যে জমি দখল করছে, সেখানে আমার ১০০ শতাংশ জমি আছে। তাতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। উঁচু জমি হওয়ায় বারোমাস সবজির আবাদ করা যায়। কৃষি কাজ করেই সংসার চলে আমার, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জোরে আমাদের ফসলি জমি নিয়ে যাচ্ছে। আমরা জমি ফেরত চাই, নয়তো জমির ন্যায্যমূল্য চাই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি হুকুম দখল শাখা) রিগ্যান চাকমা বলেন, কয়েক বছর আগেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সে জমি চিহ্নিত করতে গত মঙ্গলবার ম্যাপ ধরে জায়গা মাপা হয়েছে। কোনোভাবেই অন্য দাগের জমিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। জমিগুলো চরের। এতদিন স্থানীয়রা যে যেভাবে চাষাবাদ করে আসছিলেন, তারা হয়তো ভেবেছিলেন এটি তাদের জমি। মাপতে গিয়ে প্রকৃত সীমানা বেরিয়ে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্নেহাশীষ দাশ বলেন, মামলা হুমকি, ধমকির বিষয়টি একেবারে বানোয়াট। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সংস্থা এবং স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা জমি মাপতে গিয়েছিলাম। সেখানে জমির পরিমাপ করা হয়েছে। কারো জমিতে জোর করে দখল করে সীমানা দেওয়া হয়নি। এরপর আবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমি মাপার কাজ করবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিমার্ণকারী সংস্থা।
মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এটা নতুন কিছু না। ২০১৫ সালে থেকেই এটার কার্যক্রম চলছে। আমি আসার আগেই অধিগ্রহণের টাকা সবাই পেয়ে গেছে। জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর্যায়ে আমি। আমার আসার আগেই কিন্তু কাজ শেষ। বিদ্যুৎ এখন মূল্যবান সম্পদ। কোনোভাবে এটাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা যাবে না। দুই পক্ষের শুনানি অনেক আগেই শেষ। এখন জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পালা। বুঝিয়ে দেওয়ার সময়ে আপিলের সুযোগ নেই। তারপরও আমি শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। ওনারা স্মারকলিপি দিয়েছিল আমি তা উপরে পাঠিয়েছি। এসব কর্মসূচি অনেক আগের ইস্যু। তারা সঠিকভাবে জমিগুলো মাপতে দিচ্ছে না। কি অবস্থায় আছে তা দেখতেও দিচ্ছে না।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছায়েব আলী সিকদার, মো. মনির হোসেন মাহমুদ, আবুল খায়ের পাইক, কৃষক মিরাজুল ইসলাম, হারেছ পাইক, মো. ইদ্রিস আলী, মো. শফি মিজি, আব্দুল রহমান, মো. জালাল বেপারী, আব্দুল আউয়াল ও নুর হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
জেএইচ