ভোলা: তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি ভোলার মেঘনায় ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়নি উদ্ধারকারী জাহাজ (বার্জ) হুমায়রা।
এদিকে উদ্ধার অভিযানে দেরি হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে অন্যদিকে অর্ধ-নিমজ্জিত জাহাজটি নদীতে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ ডুবুরি দলের সদস্য ইমাম হোসেন জানান, জাহাজটি বর্তমানে পানির ৫৫ ফুট নিচে রয়েছে এবং এটি ধীরে ধীরে নদীর তলদেশের দিকে চলে যাচ্ছে। সময় যত বাড়বে ঠিক ততই এটি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে জাহাজ দুর্ঘটনার দুই দিন পর মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নতুন করে আরও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ থেকে তিন সদস্যের এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
এর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন থেকে চার সদস্যের এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে এসব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা বালাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ডিজিএম মো. মোরশেদ হোসাইন আলম বলেন, কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো, দুর্ঘটনার কারণ এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করতে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রতিবেদন দাখিল করবো।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে এখনও জাহাজটি অর্ধ-নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। জাহাজের তেল ভাসছে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। এতে পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলে ইব্রাহিম, বশির ও আলম বলেন, নদীতে তেল ভাসছে এবং চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ঠিকমত মাছ শিকার করতে পারছি না। কোনো কোনো পয়েন্টে আবার মাছ ভাসছে।
তুলাতলীর মৎস্য আড়ৎদার মনজুর আলম বলেন, নদীর পানি দিয়ে জেলেরা বিভিন্ন সময় রান্না ও গোসলের কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু তেল ভাসার কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও ইলিশের দেখা মিলছে না। ভেসে উঠছে পোয়া, টেংরা মাছ। এমন অবস্থা থাকলে নদীতে মাছের সংকট দেখা দেবে। নদীতে তেল ভাসার কারণে মাছের প্রজনন ও ডিম উৎপাদনে ভবিষ্যতে সংকট দেখা দেবে বলে মনে করছে মৎস্যবিভাগ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওবায়দুল্লা বলেন, তেলের কারণে মৎস্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, দূষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমরা নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। দু'একদিনের মধ্যে বিষয়টি আমরা জানতে পারবো। তবে জলজ উদ্ভিদের ক্ষতি হতে পারে।
বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) মো. শাহজাহান বলেন, দুর্ঘটনার সময় মেরিন আইন অমান্য করে চলাচল করেছে কার্গোটি। এসময় কার্গোতে ছিলেন না কোনো ক্যাপ্টেন। ঘন কুয়াশায় অদক্ষ চালক দিয়ে পরিচালনার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি। জাহাজটির ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবে বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড জোনের অপারেশন অফিসার লে. এম হাসান মেহেদি।
তিনি বলেন, আমাদের ডুবুরি দল প্রস্তুত রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি কবে নাগাদ উদ্ধার হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। তৃতীয় দিনে মত তেল ছড়িয়ে পড়ছে মেঘনায়। এতে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের লস্কর ফরিদুল আলম পাটোয়ারি বলেন, জাহাজে ক্যাপ্টেন ছিল না, রাতে জাহাজ চালান সেকেন্ড মাস্টার শাহ পরান ও বড় মাস্টার বেল্লাল এবং সুকানি মুরাদ। যদি ক্যাপ্টেন থাকতে তাহলে এমন দুর্ঘটনা হয়ত ঘটতো না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
আরএ