ফরিদপুর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে নিয়েছেন মাদরাসা সুপার। সেখানেই তার বাসভবন।
এমনই চিত্র দেখা যায়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দি বাজার সংলগ্ন জগজ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসবের নেপথ্যে আছেন মাদরাসা সুপার ইব্রাহিম হুসাইন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, সালথা উপজেলার সর্বশেষ প্রান্ত যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী বাজার। এ বাজার দুইভাগে বিভক্ত। একাংশ সালথা উপজেলার অন্তর্গত যদুনন্দী বাজার এবং অপর অংশ বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত রুপাপাত বা কালীনগর বাজার। যদুনন্দী বাজারের ভেতরে ২০০৭ সালে গড়ে উঠে জগজ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা। এ মাদরাসায় দুই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। মাদরাসায় ১৬জন শিক্ষকসহ মোট ২০জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। মাদরাসাটি ২০২০ সালে এমপিওভূক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদরাসা সুপার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত মাদরাসাটি। এর মধ্যেই একটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে খাট, আলমিরা, সোফা সেটসহ বসবাসের বিভিন্ন আসবাবপত্র রেখেছেন মাদরাসা সুপার। অপর একটি শ্রেণিকক্ষে সহ-সুপার কেরামত আলীর বসবাস। এছাড়া আরও একটি শ্রেণিকক্ষ তালাবন্ধ দেখা যায়। সেখানেই মাদরাসা সুপারের ঠিকাদারের কাজে ব্যবহৃত মালামাল ও যন্ত্রাংশ রাখা আছে। তবে তিনি এ প্রতিবেদককে রুমটি খুলে দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং নানা টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি জানান- রুমটির চাবি তার কাছে নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলেন, মাদরাসা সুপার ইব্রাহিম নিজের ইচ্ছে মতো মাদরাসাটি পরিচালনা করেন। তার কথামতো এখানে সবকিছু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ বসবাস করে আসছেন। মাদরাসার লাইব্রেরীতে বসেই ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মহাসিন খান নামের তার এক ভাই এখানে এসে থাকেন। দুই ভাই মিলেই ঠিকাদারি কাজ করেন।
তারা আরও জানান, মাদরাসার অনেক কাজই তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করেই প্রকৃত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে তিনি সার্বক্ষণিক দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। মাদরাসার সুপার হিসেবে আমল আখলাকের ধার ধারেন না, মাথায় টুপি রাখলে নাকি তার মাথা গরম হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে মাদরাসা সুপার ইব্রাহিম হুসাইন এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি মাদরাসার শুরু থেকেই এখানেই বসবাস করে আসছি। মাঝে মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ করতাম। এখন কিছু করি না। সে জন্যই পুরানো কিছু মালামাল রুমে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় চাকী বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবগত করেননি। এছাড়া এমপিওভূক্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ দখল করে থাকার কোনো আইন নেই।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ-খবর নেওয়া হবে এবং কোন আইনে তিনি মাদরাসায় বসবাস করেন আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এসআইএ