ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই, যা জানালো মানি প্লান্ট লিঙ্ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই, যা জানালো মানি প্লান্ট লিঙ্ক ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরার তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী ১১ নম্বর সড়কে গত বৃহস্পতিবার ( ৯ মার্চ) সকালে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

এত বিশাল অঙ্কের টাকা বহনের সময় কোনো গানম্যান রাখা হয়নি, এমনকি এত সকালে নির্জন রাস্তা দিয়ে টাকা বহনের সময় পুলিশকেও আগে থেকে অবগত করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে মুখ খুলেছে নি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড।

এ ব্যাপারে মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক অজয় কর বলেন, সেদিন আমাদের সত্যিই টাকা বহনকারী গাড়িতে গানম্যান ছিল না। তবে সিকিউরিটির লোকজন ছিল। ডাকাত দলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, মারামারিও হয়েছে। ডাকাত দল আমাদের গাড়ির দরজাও ভেঙে ফেলেছে।

টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশকে না জানানোর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সাধারণত টাকা বহনের সময় পুলিশকে জানানো হয় না। কারণ এটা আমাদের রেগুলার একটিভিটিজ। সপ্তাহে পাঁচদিনই আমাদের এই কার্যক্রম চলে। শুধু আমরা না, টাকা বহনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও জানায় না।

গাড়িতে গানম্যান না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেলারি টাইমে আমাদের শিডিউলে ব্যাপক প্রেসার পড়ে৷ প্রেসারের কারণে শিডিউলের বাইরে গিয়েও আমাদের ডিপ্লয়মেন্ট করতে হয়৷

ফাঁকা রাস্তায় এত পরিমাণ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অজয় কর বলেন, আমাদের মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে তুরাগ পর্যন্ত যাওয়ার নতুন রাস্তা হয়েছে। গত ২-৩ মাস ধরে ওই সড়কটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছিল।

গাড়িতে থাকা কারো সঙ্গে ছিনতাইকারীদের যোগসাজস থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তদন্তাধীন বিষয়, ডিবি পুলিশ সেটা তদন্ত করেছে। তবে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এমন ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি। যারা ছিনতাই করেছে তাদের হয়ে টাকা বহনকারী গাড়িতে ইনফর্মার থাকতে পারে।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতারের পর এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ডিবি পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

এ সময় তিনি বলেন, গ্রেফতারদের কাছ থেকে আরও ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকার মিরপুর, বনানী, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আড়াই কোটির বেশি টাকা উদ্ধারসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া (২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন (৯ মার্চ) উদ্ধার করা হয় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ নিয়ে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। এ ঘটনায় এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এরপর বিভিন্ন সূত্র ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকা, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছি।

অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, প্রথমে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে সানোয়ারে তথ্যানুসারে বনানী থেকে ইমনকে গ্রেফতার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পরে ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুইজনকে গ্রেফতারের পর ১ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

ডিবির অপর একটি দল সিলেটের সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই ও এনামুল হক বাদশাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গত ৮ মার্চ সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছিনতাইকারীরা। গাড়ির চালক কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে আসলে পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়, এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্টের গাড়ি ফলো করতে ওত পেতে থাকে।

ছিনতাইকারী দলটি দীর্ঘদিন ধরে মানি প্লান্টের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে আসছিল। তারা জানতো টাকা বহন করার ক্ষেত্রে মানি প্লান্টের কোনো সিকিউরিটি ও অস্ত্র ছিল না।

মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে ছিনতাইকারী দল ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্টের গাড়ি অনুসরণ শুরু করে। এভাবে ছিনতাইকারী দলের ভাড়া করা মাইক্রোবাস তুরাগের নির্জন স্থানে পৌঁছার পর দুই গাড়ির ধাক্কা লাগায়।

এ অজুহাতে গাড়ি থেকে ছিনতাইকারীরা নামে ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা মানি প্লান্টের গাড়ি থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে যায়। এরপর গাড়িতে থাকা ম্যানেজারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে টাকার ট্রাংকসহ নিজেদের মাইক্রোবাস নিয়ে ৩০০ ফিটের নির্জন এলাকার দিকে চলে যায়।

গ্রেফতার আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ৯ মার্চ রাতে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।