ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিসিবি পারেনি, করে দেখিয়েছেন মাখন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
বিসিবি পারেনি, করে দেখিয়েছেন মাখন

ঢাকা: স্বাধীনতার পর থেকে এখন অবদি ক্রিকেটের কোনো ধরনের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু দেশের ৫০ বছরের এ ইতিহাস লিখেছেন লুৎফুর রহমান মাখন।

শুধু মাত্র শখের বসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস লিখেছেন মাখন। তার লেখায় আছে দেশ ভাগের আগে বাংলা অঞ্চলের ক্রিকেটের ইতিহাস; ৫০ দশকের এ অঞ্চলের ক্রিকেটের উত্থান; অতীতের ক্রিকেট অবকাঠামো; খেলা ও সংশ্লিষ্ট বহু অজানা তথ্য। মাখনের স্মৃতিচারণ গ্রন্থ ‘ক্রিকেটের সাথে চলা’ বই থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে লুৎফুর রহমান মাখনের লেখা বইটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান বক্তারা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান।

ক্রিকেটের সাথে চলা গ্রন্থের লেখক লুৎফুর রহমান মাখন বলেন, আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে সবারই খেলাধুলায় আগ্রহ আছে। আমাদের ভাই বোনের ভেতরে মোটামুটি সবাই খেলাধুলা করেছি; শুধু এক বোন বাদে। খেলাধুলার মাধ্যমেই মানুষের মনের উন্নতি হয়। এ বিষয়ে শিশুদের কখনোই বাধা দেওয়া উচিত নয়। আমার পরিবার খেলাধুলার বিষয়ে আমাকে কখনো বাধা দেয়নি, বরং উৎসাহ দিয়েছে।

আমি প্রথম বইটি যখন লিখি, কামরুজ্জামান ভাই তখন আমাকে ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে কিছু লিখতে অনুরোধ করেন। আমি তার অনুরোধ ‘না’ করতে পারলাম না। বইটিতে আমি আমার সম্পর্কে কিছু লিখিনি। ক্রিকেটের বিভিন্ন ইতিহাস তুলে ধরেছি। আমার সময়ের ক্রিকেটার স্ট্যান্ডার্ড আর বর্তমান সময়ের স্ট্যান্ডার্ডে অনেক তফাৎ। সেজন্য বইটিতে আমি ক্রিকেটের ইতিহাসকে টেনে আনলাম। ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে আমার সময় ক্রিকেটের চিত্র বইটিতে তুলে ধরেছি। এই বইটা লেখার বিষয়ে হায়দার রহমান এবং দুলাল আমাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বইটা পড়ে ৫০-৬০ দশকে ঢাকা স্টেডিয়াম এলাকা কেমন ছিল তার পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক সময় এখানেই কেটেছে। ৫৪ সালের দিকে আমাদের বাসার পাশেই সংবাদপত্রের অফিস ছিল। সেখানে গিয়ে শুধু খেলার পাতা পড়তাম। তখন জনপ্রিয় ছিল ফুটবল। তখন স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল কাঠের।

৫০ দশকেই চার-পাঁচটা জায়গায় নেট প্র্যাকটিস হতো। তখন সামনে পিছনে আমরা ঘুরঘুর করতাম। বল কুড়িয়ে দিতাম। ৫৯ সালে আমার নেট প্র্যাকটিস শুরু হয়। সেই সময় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ি। রাজনীতিতে বিশেষ আগ্রহের কারণে পরে আর খেলা হয়নি।

বইটিতে ৪৭ পূর্ব সময়ের ক্রিকেট নিয়েও লেখা হয়েছে বলে জানান প্রথম আলো সম্পাদক। তিনি আরও বলেন, লেখক নাটোর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহীতে কাদের হাত ধরে ক্রিকেটের পথচলা, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ইতিহাস তুলে এনেছেন। মাখন ভাই ছাড়া আর কারও পক্ষে এতো ছোট ছোট বিষয় তুলে আনা সম্ভব না। সে সময়ের অনেক খেলোয়াড়দের নাম আছে এখানে। যাদের নাম দেখলে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়।

সভাপতির বক্তব্যে প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক কামরুজ্জামান বলেন, মাখন ভাইয়ের বই যে আমাদের জন্য দিশা হয়ে আসবে তা ভাবিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস এবং মাখন ভাইয়ের সময়ের ক্রিকেটের কার্যক্রম বইটিতে লেখা আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পুরো ইতিহাস না হলেও প্রথম দিকের ইতিহাস অনেকখানি বইটিতে আছে। মাখন ভাই বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় একটি কাজ করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ক্রিকেটের বিষয়ে কোনো ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি। সেখানে মাখন ভাই চেষ্টা না করে শখের বশে লিখেছেন। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস উপহার দিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য।

বইটির বিষয়ে সাংবাদিক উৎপল শুভ্র বলেন, মাখন ভাইয়ের এই বইটা সাংবাদিকদের জন্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই ধরনের কালচার আমাদের দেশে তেমন একটা নাই। মাখন ভাইয়ের মতো যারা আছেন তারা যদি তাদের স্মৃতি কথা এভাবে লিখে যান তাহলে আমারা যারা আছি ভবিষ্যতের জন্য অনেক কাজে দেবে।

সাংবাদিক দুলাল মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আশা করব মাখন ভাইয়ের বইয়ের মতো অন্যরাও তাদের অভিজ্ঞতা লিখবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।