ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতীয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে আদিলকে খুন করে তার গৃহশিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
ভারতীয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে আদিলকে খুন করে তার গৃহশিক্ষক গ্রেপ্তার ঘাতক আবদুল আহাদ, ইনসেটে নিহত শিশু আদিল

চাঁদপুর : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের  ৮ বছর বয়সী ছেলে আদিল মোহাম্মদ সোহান হত্যারহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।  

পুলিশ জানিয়েছে, মুক্তিপণের লোভে অপহরণ করতে গিয়ে শিশু আদিলকে হত্যা করে তারই গৃহশিক্ষক মো. আবদুল আহাদ।

ইতোমধ্যে ঘাতক আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার মো. আবদুল আহাদ একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আদিলকে হত্যার দায় স্বীকার করে আহাদ জানিয়েছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে শিশুর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের ভাবনা আসে তার। এরপর আদিলকে অপহরণের পর মুখ চেপে ধরলে সে মারা যায়। এরপর নিজেকে রক্ষায় নিহত আদিলের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখে সে।  

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান চাঁদপুর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ।

তিনি বলেন, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে ছেলে বাড়িতে না ফেরায় তাকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকেন আদিলের অভিভাবকরা। কোথাও না পেয়ে পরদিন ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন তারা। আদিলের খোঁজে নামে পুলিশ। ১৯ মে সকালে সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে বাড়ির পাশের আবদুল মতিন নামে এক ব্যক্তির জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় ওইদিনই আদিলের বাবা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। খুব কাছের লোকই আদিলকে হত্যা করেছে বলে সন্দেহ হয় পুলিশের।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর গৃহশিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে মঙ্গলবার (২৩ মে) গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধী আবদুল আহাদ জানায়, সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলা চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় আহাদ তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আদিলের মার কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়। কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধী আহাদও আদিলের পরিবারের সঙ্গে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলে গেলে আহাদ ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন আদিল জীবিত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্না ঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুড়ে আবদুল মতিনের জমিতে আদিলের মরদেহ পুঁতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ওই রান্না ঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সিমকার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহশিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলো। সে জানতো আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে সে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।