ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ড: গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ড: গণতদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

ঢাকা: গণতদন্ত কমিশন গঠন করে সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার পুনঃতদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক মানিক সাহা কলম তুলেছিলেন।

তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে হবে।

বোমা হামলায় নিহত একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় এসব কথা বলা হয়। সভার আয়োজন করে সাংবাদিক মানিক সাহার সুহৃদরা।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের সঞ্চালনায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কান্তিসহ আরও অনেকে।

স্মৃতিচারণ সভার শুরুতে মানিক সাহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে মানিক সাহার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন নির্ভীক সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন সে কারণে তার উপর হামলা হতে পারে। কিন্তু তারপরও কখনো বিন্দু মাত্র দুশ্চিন্তা তার মাঝে ছিল না। আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাব, মানিক সাহাসহ যে সাংবাদিকেরা হত্যার শিকার হয়েছেন, তারা যেন সুষ্ঠু বিচার পান।  

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আইন যদি অন্যায্য হয়, তাহলে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। মানিক সাহাসহ অন্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পেছনে আইনের প্রয়োগের অভাবই দায়ী। মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন করতে হবে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পকনারীদের উন্মোচন করতে হবে।

মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচারে গণতদন্ত কমিশন গঠনের আহবান জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপসহীন ছিলেন। জনমুখী সাংবাদিকতার জন্যই মৌলবাদী শক্তি তাকে হত্যা করেছে। তার হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে ২০০৬ সালে যে রায় হয়েছিল, তা ছিল গোঁজামিলের রায়। আমরা এ হত্যার পুনঃতদন্ত চাই। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সবার বিচারের দাবিতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

স্মৃতিচারণ সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানান স্মৃতি তুলে ধরে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মানিক সাহা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। নীতিহীনতাকে পরাজিত করে যদি নীতিনিষ্ঠা আনা যায় বাংলাদেশে, তাহলে মানিক সাহার হত্যার বিচার এ দেশে হবেই।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, মানিক সাহার হত্যার বিশ বছর পরও আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার বরাবরের মতোই হচ্ছে না। সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর হামলা হচ্ছে। মনে হয় এই দেশে কোনো অলিখিত নিয়ম আছে, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হবে না। তাই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আমাদের অবিলম্বে সোচ্চার হতে হবে।

নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, মানিক সাহার সঙ্গে আমার পরিবারের অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মারা যাওয়ার আগের দিনও মানিক সাহা আমার সঙ্গে ছিলেন। তার হত্যার মাস্টারমাইন্ড কারা, তা বের করা তেমন কোনো বিষয় নয়। আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো আপস করেননি। তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। তাই ২০ বছর পর নতুন করে বলতে চাই, এই দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, পদ্মা সেতু হয়েছে, এ দেশের মাটিতে মানিক সাহা হত্যারও বিচার হতে হবে।

আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেত্রী  উম্মুল ওয়ারা সুইটি, সাংবাদিক নেতা মানিক লাল ঘোষ, শাকিলা পারভীন, রফিকুল ইসলাম সুজন ও সাংস্কৃতিক কর্মী পুলক রাহা।

আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী নুর আলী, সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে, কামরুজ্জামান ননি, সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতা তারেক উদ্দিন তারেক, লায়লা পারভীন সেজুতি, ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
ইএসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।