ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পাঁচতলা একটি ভবন। আগুনে পুড়ে গেছে একাধিক পোশাক কারখানা ও একটি প্রিন্টিং ফ্যাক্টরি।
এ ভবনের তিন ও চার তলায় অবস্থিত ছিল ‘আর এন ফ্যাশন’ নামে একটি গার্মেন্টস। সেখানেই কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন নাজমুল ইসলাম। এক বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাজমুল আগুন লাগার সময় ভবনের চারতলায় ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে ভয়াবহ সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি চারতলায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পাই। জানালা খুলে দেখি সামনের কেমিকেল আর ওয়াস ফ্যাক্টরির মাঝখান দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আগুন আমাদের দিকেই ছুটে আসছে। নিচে নামার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। চারতলায় আমরা আটকে পড়েছিলাম। পরে ভবনের পেছনের দিকের জানালা ভেঙে এক ব্যক্তি তাদের সাতজনকে বের করে আনেন। আমরা পাশের টিনশেডের ওপর লাফ দেই। কোনোমতে বাঁচতে পেরেছি। তবে তিনতলার কেউ বের হতে পেরেছে কিনা জানি না।
নাজমুলের ভাষ্য অনুযায়ী, ভবনটি ছিল পাঁচতলা। প্রতিটি ফ্লোরে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন করে কর্মী কাজ করতেন। পাঁচতলার কর্মীরা সবাই বের হতে পেরেছেন বলে জানা গেলেও তিনতলার অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি।
তিনি আরও জানান, দোতলায় ছিল ‘স্মার্ট প্রিন্টিং’ নামে একটি টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, যেখানে ছয়জন কর্মী ছিলেন। সেদিন তাদের ছুটি থাকায় সবাই নিরাপদে ছিলেন। ভবনের নিচতলা ছিল খালি।
‘আর এন ফ্যাশন’ গার্মেন্টসের মালিক রেজাউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। তাদের নামের অক্ষর নিয়েই গার্মেন্টসটির নামকরণ করা হয়েছে। গেঞ্জি তৈরির কাজ করা হতো এ ফ্যাক্টরিতে। পাঁচতলায় ছিল আরেকটি গার্মেন্টস ‘বিসমিল্লাহ ফ্যাশন’, যার মালিক রাজীব।
নাজমুল জানান, তিন নম্বর সড়কের ওই ভবনের হোল্ডিং নম্বর ৪১। চারতলার ওপরে টিনের ছাউনি দিয়ে আরেকটি তলা তৈরি করা হয়েছিল। ভবনের মাঝখানে ছিল একটি মাত্র সিঁড়ি—যা দিয়ে কর্মীদের ওঠানামা করতে হতো।
আগুনে বিধ্বস্ত ভবনটিতে এখনো ছড়িয়ে আছে পোড়া কাপড়, ভাঙা মেশিন আর অজানা আতঙ্কের গন্ধ।
বেঁচে ফেরা নাজমুলের চোখে এখনো সেই আগুনের লেলিহান শিখা ভাসে, আমরা যারা বের হতে পেরেছি, শুধু আল্লাহর রহমতেই বেঁচে গেছি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘গার্মেন্টস অংশ থেকে মোট ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবক আহত হয়েছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কেউ আহত হননি।
তিনি বলেন, মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে, চেহারা দেখে বা অন্য কোনোভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে না।
এমএমআই/আরআইএস