ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আনার হত্যায় কারা লাভবান, তা তদন্তে বের হবে: হারুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২৪
আনার হত্যায় কারা লাভবান, তা তদন্তে বের হবে: হারুন

ঢাকা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যায় কারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান, তা বের করা হবে বলে আশাবাদী  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।  

তিনি বলেছেন, কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান, তা আশা করি বের হবে।

সংসদ সদস্য আনার হত্যায় মোটিভ (উদ্দেশ্য) তো অবশ্যই আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সুনির্দিষ্ট মোটিভ বলতে পারছি না। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সম্ভাব্য কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করছি।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।  

হারুন অর রশীদ বলেন, যখনই আনার হত্যার খবর আসে তখনই আমরা কিন্তু মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার করি। এরপর তানভীর ও শিলাস্তিকে গ্রেপ্তার করি। তারা বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আমরা নিজেরা কলকাতায় গিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেনস পরিদর্শন করি। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও দুজনের নাম জানতে পারি। তারা হলেন, ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান।  

তিনি বলেন, ফয়সাল ও মোস্তাফিজ আত্মগোপনের জন্য ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডের মাঝখানে পাতাল কালী মন্দিরে লাল ধুতি পরে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিচয়ে পাতাল কালী মন্দিরে বাঁচার জন্য লুকিয়েছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একটি দল ছিল ঝিনাইদহে, সুন্দরবনেও একটি দল গিয়েছিল। আর দুটি দল খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডে কাজ করছিল অনেকদিন ধরে। সবদিকে গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে আমরা গতকাল সেই দুজনকে গ্রেপ্তার করি। শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের জন্য যা যা করার দরকার, তারা তা-ই করেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন ফয়সাল। তিনি আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যান, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন শিমুল ভূঁইয়া। আর অন্যদিকে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ ও জিহাদ হাওলাদার।

তিনি জানান, ফয়সাল ও শিমুল ভূঁইয়া আনারকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন শিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান। তারা নিচে কর্নারের রুমে যান। আনার যখন তাদের গতিবিধি বুঝতে পারেন, তখন অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ফয়সাল তার নাকে-মুখে ক্লোরোফরম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়।

সংসদ সদস্য আনার কিলিং মিশনে সাতজন অংশ নেন। তারা সাতজনেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন শিমুল ভুঁইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজুর; ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার, আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে আত্মগোপনে থাকা গ্রেপ্তার সিয়াম এবং তানভীর ও শিলাস্তি। এর বাইরে আরও দুজন আমাদের কাছে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও গ্যাস বাবু। ডিবির হাতে গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

আখতারুজ্জামান শাহীনের বিষয়ে হারুন বলেন, শাহীন মাস্টারমাইন্ড। তিনি তদন্ত থেকে ছিটকে যাননি। কিলিং মিশনে সরাসরি জড়িত সাতজনই গ্রেপ্তার। এর বাইরে মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা এবং এর মোটিভ- এসব তো অন্য বিষয়। এখনো আমাদের কাছে শাহীন মাস্টারমাইন্ড। কারণ তিনিই তো তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। হত্যাকার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া, সবই তো শাহীন করেছেন। শাহীন ১০ মে দেশে আসেন। জিহাদ ছাড়া কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া কেউ নেপালে চলে যান, কেউ দেশে ফেরেন। শিমুল ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের পর শাহীন প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল তারপর দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে যান। তিনি তো ইউএস সিটিজেন (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক)।  

সবশেষ যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো, হত্যার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি সম্পর্কে তারা কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, কলকাতার একটি মার্কেট থেকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে তারা একটি চেয়ার কেনেন, সঙ্গে নেন ক্লোরোফরম। সেই চেয়ারে বেঁধে আনারকে বিবস্ত্র করা হয়। কাজগুলো করেন ফয়সাল। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সিয়াম এনে দেন ফয়সালকে।

হত্যাকাণ্ডের পর মোস্তাফিজ ও ফয়সাল দেশে ফেরে শাহীনকে কল করে জানতে চান, তারা কোথায় থাকবেন। পরে তারা শাহীনের ভাটারার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ট্রাক ড্রাইভার। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মোবাইল বন্ধ করে তারা চলে যান খাগড়াছড়ির গহীন অঞ্চলে। পরে  সীতাকুণ্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালী মন্দির এলাকায় গিয়ে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল হয়ে যান পলাশ রায়, আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। তারা মন্দিরে গিয়ে বলেন, মা-কে তারা খুব ভালোবাসেন। কালী মন্দির ছাড়া থাকতে পারেন না। চুলের ধরন পরিবর্তন করেন, ধুতি পরেন বলে জানান ডিবির এ অতিরিক্ত কমিশনার।

হত্যার মূল উদ্দেশ্য কী- জানতে চাইলে হারুন বলেন, যেকোনো হত্যার পেছনে একটি মোটিভ বা উদ্দেশ্য থাকে। আনোয়ারুল আজিম আনার জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ছিলেন। তাকে টাকা-পয়সা লেনদেনের কথা বলে যান শাহীন। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, কারা লাভবান, কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান, তা আশা করি বের হবে। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় মোটিভ তো অবশ্যই আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সুনির্দিষ্ট মোটিভ বলতে পারছি না। আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সম্ভাব্য সব কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। আমরা সর্বশেষ গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে নেব, জিজ্ঞাসাবাদ করব। হত্যার সম্ভাব্য সব মোটিভ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা অনর্থক কাউকে ডাকাডাকি করছি না। নির্দোষ কাউকে হয়রানি করছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২৪
এমএমআই/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।