ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা নিয়ে চাকরি দিতে না পেরে ৩ যুবককে হত্যা করেন কনক! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
টাকা নিয়ে চাকরি দিতে না পেরে ৩ যুবককে হত্যা করেন কনক! 

টাঙ্গাইল: তিন যুবককে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু কাউকে চাকরি দিতে পারেননি।

টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয়, সেজন্য তিনজনকেই হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে তাদের হত্যা করে মরদেহ গুম করেন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য মো. কনক।  

তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার মুশুদ্দি দক্ষিণ পাড়ার তালেব আলীর ছেলে। কনক ঢাকা সেনানিবাসে সৈনিক পদে চাকরি করতেন, পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।  

তিন যুবককে হত্যার কথা স্বীকার করে বুধবার (১৭ জুলাই) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কনক।  

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজ উদ্দিন ফরাজি তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন আদালত।  

হত্যার শিকার তিন যুবক হলেন- টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সামাদ সজীব (১৮), গোপালপুর উপজেলার মজিদপুর গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে আতিক হাসান (১৮) এবং জামালপুর সদর উপজেলার জুনায়েদপাড়া গ্রামের ঠাণ্ডা মিয়ার ছেলে মো. রাহাদ হোসেন ওরফে উজ্জ্বল (১৮)।  

এদের মধ্যে সামাদ সজীবের মরদেহ গত ১ ফেব্রুয়ারি বাসাইল উপজেলার পাটখাগুড়ি গ্রামের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশের ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। আতিক হাসানের মরদেহ গত ৩ মার্চ উদ্ধার করা হয় মধুপুর গড় এলাকার একটি আনারস বাগান থেকে। সর্বশেষ ১২ মার্চ রাহাত হোসেন উজ্জ্বলের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের পাশে মীরহামজানি গ্রামের একটি বালুল স্তূপ থেকে। তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় না পেয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পরিচয়বিহীন মরদেহ হিসেবে তাদের দাফন করে পুলিশ। তিনটি মামলারই তদন্ত করছে টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  

বুধবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহত ওই তিন যুবককে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে আট লাখ টাকা করে নেন কনক। কিন্তু পরে তাদের চাকরি দিতে না পারেননি তিনি। আর ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে ওই তিনজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কনক।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সজীবকে চাকরিতে যোগদানের কথা বলে কনক গত ৩১ জানুয়ারি তার টাঙ্গাইল শহরের আটপুকুর এলাকার বাসায় নিয়ে আসেন। পরে একজনের সহযোগিতায় রাতে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন কনক। হত্যার পর মোটরসাইকেলে কনক ও তার সহযোগী হেলমেট পরিয়ে সজীবের মরদেহ মাঝখানে বসিয়ে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে দেন। পরে মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল ঢেলে সজীবের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বাসাইল থানার পুলিশ ৪ ফেব্রুয়ারি ওই মরদেহ উদ্ধার করে।  

একইভাবে গত ২ মার্চ গোপালপুরের মজিদপুর গ্রামের আতিক হাসানকে কনক ও তার সহযোগী মধুপুর গড় এলাকার পীরগাছা রাবার বাগান এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে স্থানীয় এক পাহাড়ি ব্যক্তির বাড়িতে তারা মদ্যপান করেন। আতিক হাসান মাতাল হয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি আনারস বাগানে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে একইভাবে মরদেহে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন মধুপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ওই মরদেহ উদ্ধার করে।  

পরদিন ৩ মার্চ চাকরিতে যোগদানের জন্য উজ্জ্বলের বাবার কাছে খবর পাঠান কনক। ওই দিন উজ্জ্বলের বাবা টাঙ্গাইল শহর বাইপাস এলাকায় এসে কনকের কাছে উজ্জ্বলকে দিয়ে যান। পরে উজ্জ্বলকে নিজের বাসায় নিয়ে গলা টিপে হত্যা করেন কনক ও তার সহযোগী। পরে মরদেহ হেলমেট পড়িয়ে মোটরসাইকেলে বসিয়ে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কে। সেখানে রাস্তার পাশে চারলেন কাজের জন্য রাখা বালুর স্তূপের নিচে মরদেহ চাপা দেন তারা। গত ১২ মার্চ মরদেহটি পুলিশ উদ্ধার করে।  
পুলিশ সুপার জানান, তিন যুবকের খোঁজ না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি সেনা কর্তৃপক্ষকে জানালে কনকের চাকরি চলে যায়।  

এদিকে সজীবের বাবা বাদী হয়ে কনকসহ পাঁচজনের নামে টাঙ্গাইল আদালতে একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে গত ১ জুন মামলাটি ঘাটাইল থানায় তালিকাভুক্ত করা হয়।  

অপরদিকে নিহত আতিক হাসানের বাবা বাদী হয়ে কনকসহ চারজনের নামে গোপালপুর থানায় গত ২১ জুন একটি মামলা করেন। উজ্জ্বলের বাবা বাদী হয়ে কনকের নামে গত ১৪ এপ্রিল আরও একটি মামলা করেন জামালপুর সদর থানায়।  

ঘাটাইল থানার মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে জামালপুর সদর থানায় করা মামলায় কনক কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি জামালপুর কারাগারে আছেন। ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া জানান, আদালতের মাধ্যমে আসামি কনককে ঘাটাইল থানায় সজীবের বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার রিমান্ড চেয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কনক তিন যুবককে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি এক সহযোগীর নামও বলেন। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। বুধবার টাঙ্গাইল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়। তিনি তিনটি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেন।  

পুলিশ সুপার জানান, কনক জানিয়েছেন, তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে যে ২৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন, তার মধ্যে নয় লাখ টাকা তার সহযোগীকে দিয়েছেন এবং বাকি টাকা অনলাইনে জুয়া খেলে হেরেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।