ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাইবান্ধায় অবরোধ চলাকালে আহত দুই শতাধিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
গাইবান্ধায় অবরোধ চলাকালে আহত দুই শতাধিক

গাইবান্ধা: ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গাইবান্ধা জেলা। সড়ক অবরোধসহ একাধিক স্থাপনায় ভাঙচুর-আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেটে সাংবাদিকসহ অন্তত: দুইশ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সকাল ১১টা থেকেই খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে গাইবান্ধা পৌর পার্কে জড়ো হন গাইবান্ধার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ। পরে তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়।

পরে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে আবারও পৌর পার্কে ফিরে আসে। এসময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পৌরসভার কার্যালয় ভাঙচুর ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চালায়।  

পরে দুপুর ২টার দিকে পৌর পার্ক থেকে মিছিলটি আবারও ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সামনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এসময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এতে সাংবাদিকসহ মিছিলে থাকা অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলিও ছোড়ে। এতে মিছিলে অংশ নেওয়া অন্তত দুই শতাধিকের বেশি ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের অতর্কিত এমন হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বিকেল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে পুলিশ প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

অন্যদিকে, জেলার পলাশবাড়ীতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রংপুর স্ট্যান্ড থেকে লাঠি হাতে মিছিল বের করে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী। মিছিলটি রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক প্রদক্ষিণকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে হ্যাণ্ডমাইকে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়। আন্দোলনকারীরা শহরের জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড়ের কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে।  

পরে মিছিলটি উপজেলা পরিষদ সড়ক করে গাইবান্ধা সড়কের তিনমাথা মোড়ে পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেওয়া হয় পৌর মেয়র গোলাম সনোয়ার বিপ্লবের বাড়ির সামনে পার্কিং করা একটি বাস ও পৌরসভার সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেল এবং ইজিবাইকে।  

ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির বাসাসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহাদুল ইসলামের ব্যক্তিগত চেম্বারে।

পরে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা থানায় হামলা করতে গেলে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পুরো সময়জুড়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।