ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অথৈ পানির মাঝে সংকট সুপেয় পানির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
অথৈ পানির মাঝে সংকট সুপেয় পানির

লক্ষ্মীপুর: চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরে পানি, বাইরে পানি, সড়কে পানি।

সবই তলিয়ে আছে পানির নিচে। এতো পানির মাঝে সংকট সুপেয় পানির।

একটি পরিবারে দৈনন্দিন পানযোগ্য পানির যে চাহিদা, তা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

বন্যার ঘরবাড়ির পাশাপাশি তলিয়ে গেছে নলকূপ। তাই নিরাপদ পানি উঠছে না নলকূপ দিয়ে। চুলাও পানির নিচে। তাই ফুটিয়েও পানি পান করা যাচ্ছে না। ফলে বন্যা দুর্গত এলাকায় এখন পানযোগ্য পানির জন্য হাহাকার চলছে। তবে যে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়, সেখানে বোতলজাত পানির দেখা পান বন্যার্তরা। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এজন্য লোকজনও খুব বুঝে শুনে পানি পান করেন৷

গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুরের বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে নিরাপদ পানির চরম সংকট লক্ষ্য করা গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ নলকূপ পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও দু-একটি নলকূপ পানির ওপরে থাকলেও সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দুর্গত এলাকার লোকজন৷ চারিদিকে অথৈ পানি। এর মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে পানি বয়ে আনাও কষ্টসাধ্য।

দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন পানযোগ্য পানি কম পাচ্ছেন। তাই কম করে পান করছেন পানি। অর্থকষ্টে থাকা কেউ কেউ দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে নিচ্ছেন। তবে দোকানগুলোও বন্যাকবলিত হওয়ায় সরবরাহ কম। ফলে সেখানেও রয়েছে পানিসহ অন্যান্য পণ্যের ঘাটতি। কেউ কেউ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছেন।

জেলার সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম জামিরতলী গ্রামের বাসিন্দা রঙি বাড়ির বাসিন্দা কৃষক মো. সুমন বলেন, খাবার পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যেটা পাই, কম কম করে পান করি। ত্রাণ হিসেবে বোতলের পানি যথেষ্ট নয়৷ পরিবারের নয়জন সদস্য। যতটুকু পাই, তা দিয়ে হয় না। বাড়িতে থাকা নলকূপের পানিতে আর্সেনিক। আগে যে নলকূপের পানি পান করতাম, সেটা ডুবে আছে। তাই পানি সংগ্রহ নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।

তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণের প্যাকেটের সঙ্গে বোতলজাত পানিও দেয়। তবে তা যথেষ্ট নয়।

একই এলাকার বৃদ্ধ মনজু মিয়া বলেন, বাড়ির কাছে একটি মাদরাসার পাশে নলকূপ আছে। সেখান থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে আসি। খুব কষ্ট হয়। আবার ত্রাণ হিসেবে এক বোতল পেলে তা দিয়ে কোনো মতে চালিয়ে নিই।  

আবু তাহের নামে একজন বলেন, ত্রাণ হিসেবে দুই এক বোতল পাই। আর বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি।  

ফিরোজা বেগম নামে এক নারী বলেন, খাবার পানি কেউ হয়তো এক বোতল দেয়। অল্প অল্প করে পান করি। দোকান থেকেও বোতল কিনে আনতে হয়। কিন্তু সে জন্য তো টাকা লাগে। এসময়ে চাল কেনার টাকা নেই, পানি কেনার টাকা কোথায় পাই?

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ পানির নিচে। আমাদের পুরোনো বাড়িতে শুধুমাত্র একটি নলকূপ এখনো পুরোপুরি ডোবেনি। দূরদূরান্তের লোকজন এবং পাশের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। পানি বহন করতে কষ্ট হয় তাদের।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাই। ওইসব এলাকার লোকজনের মধ্যে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখি। অনেকে আগে তাদের পানির চাহিদা জানিয়েছেন। তাই বন্যার্ত এলাকার প্রতি পরিবারের জন্য আমরা পাঁচ লিটারের বোতলে করে পানি সরবারহ করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।