ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কোথাও না কোথাও আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে: সমন্বয়ক হাসনাত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
কোথাও না কোথাও আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে: সমন্বয়ক হাসনাত বক্তব্য রাখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার পাশাপাশি জনগণকে কারো না কারো প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) টিআইবি আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত মাইডাস সেন্টারের টিআইবি কার্যালয়ের মেঘমালা হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এতবছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার থাকার একটা প্রভাব আমাদের মধ্যে রয়েছে। আমরা এখন ক্ষমতাকে ভয় পাই। সবাই মনে করে, ক্ষমতায় যে যায়, সে রাবণ হয়। আমাদের মধ্যে এই চিন্তা আছে। এই কারণে আমরা বার বার বলছি, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা, যারাই ক্ষমতায় গিয়েছে তারাই ডিরেইল হয়েছে’। এখন আমরা যদি সবকিছুকে এভাবে রিজেক্ট করি, তাহলে আমরা এই সংকট উত্তরণ করতে পারবো না। আমি মনে করি, কোথাও না কোথাও আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আমি যদি সব ফর্মের ক্ষমতাকে ডিসওন করা শুরু করি, তাহলে পরিবর্তন কাদের মধ্য দিয়ে আসবে? কোনো একটা ক্ষমতার ওপর তো আমাদের নির্ভর করতেই হবে। কোথাও না কোথাও তো আমাকে নোঙর ফেলতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা যেটা ফেইস করছি, সবাই আমাদের সন্দেহ করছে। কেন সন্দেহ করছে, কারণ আমরা যে ফরমেটে রয়েছি, এই ফরমেটে অতীতে যারা ছিল, তারা এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে ক্যাশ করার চেষ্টা করেছে বা ক্যাশ করেছে। যে কারণে মানুষের একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তারা কেন আমাদের বিশ্বাস করবে? আমরা এত সুযোগ থাকার পরেও আমরা যে সেটাকে ক্যাপিটালাইজ করছি না। এই আস্থাটা তারা কীভাবে পাবে? কারণ তারা বিভিন্ন সময় আস্থা দিয়ে আহত হয়েছে। ৪৭-এ হয়েছে, ৭১-এ হয়েছে, ৯০ পরবর্তীতে হয়েছে, এখন ২৪ পরবর্তীতে মানুষ আমাদের মধ্যে আস্থা ইনভেস্ট করতে ভয় পাচ্ছে। এটা জনগণের কোনো ভুল না। এটা তাদের অভিজ্ঞতার কারণে হয়েছে।

তবে দেশের জনগণ নিয়ে আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক। তিনি বলেন, কারণ, মানুষ এখন যেভাবে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করছে, দ্বিমত পোষণ করছে। আমার অর্থের উৎস কোথায় সেই প্রশ্ন করা হয়। এটা আমার ভালো লাগে। প্রশ্ন করার এই চর্চাটা অনেক ইতিবাচক। কারণ, আপনি যদি নিকট অতীতে যান, এসব প্রশ্নের বিনিময় মূল্য ছিল। কিন্তু আমাদের যে প্রশ্নগুলো করা হচ্ছে, এর কোনো বিনিময় মূল্য নেই। এটা নিছকই ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার একটি দৃষ্টান্ত। এবং এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এই প্রশ্ন করার চর্চাটা আমাদের অব্যহত রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের দুটি কাজ করতে হবে। এক, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখতে হবে এবং দুই, আমাদের কোথাও না কোথাও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, ক্ষমতাকে স্বাগতম জানাতে হবে। আমি যদি শুধু ক্ষমতাকে প্রশ্ন করি, সেটিকে স্বাগতম না জানাই, তাহলে আল্টিমেটলি সংস্কার হবে না। যারা দায়িত্ব নিয়েছে, তারা দায় অনুভব করবে না। তারা দায়িত্ব ডিসওন করা শুরু করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যুবকদের গড়া যায়, গাইড করা যায়। আমরা আপনাদের (সুশীল সমাজ) কাছে চাই আমাদের গাইড করেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা একাত্তরেও ফেল করছে, চব্বিশেও ফেল করছে। আমাদের তারা আহত করছে। আমরা কেন ক্ষমতা বিমুখ হলাম? আমরা কেন ক্ষমতাকে ভয় পাই? এর দায়ভার সুশীল সমাজকে নিতে হবে বা নেওয়া উচিত। আমরা চাই আমাদের সঠিক ভাবে গড়ে তোলা হোক। চব্বিশ যদি নব্বই, একাত্তর, বাহান্নর পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে মনে হয় না আমাদের যে শক্তি বা সামর্থ্যের যে জায়গা তৈরি হয়েছে এর পুনর্মঞ্চায়ন সম্ভব।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব।  

এছাড়া উন্মুক্ত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী ও উপস্থাপক ফারাবি হাফিজ, তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, রম্যলেখক ও গণমাধ্যমকর্মী শিমু নাসেরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।