ঢাকা: জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা প্রশাসক দিয়ে দেশ চলতে দেখতে চাই না। আমলারা আমলাতন্ত্রে তাদের যতটুকু টেরিটরি, তারা সেখানে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, এই কম্বিনেশন (সমন্বয়) যদি না থাকে তাহলে দিন শেষে যেভাবে রাষ্ট্রের ফাংশন করার কথা, সেভাবে ফাংশন করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে জিনিসটা পেতে চাই, আপনাদের (কাউন্সিলর) মধ্যে এমন কারো কথা আগামীতে যেন আমরা না শুনি, যিনি ক্ষমতা পেয়ে আবার সেই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কাউন্সিলর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ছাত্র-গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবি ও বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে’ এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা তারা যেভাবে বোঝেন, তাদের সঙ্গে যেভাবে মেশেন, তা কোনো আমলা কেন, যারা ওই বিভিন্ন অফিসে বসে থাকেন- যত বড় অফিসারই হোন না কেন, তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শুধু কাউন্সিলর নয়, মেম্বার হোক, চেয়ারম্যান হোক, এমপি হোক বা মন্ত্রী হোক বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনৈতিক কাঠামো বিবেচনায়, মানুষের খরচ বিবেচনায় নির্দিষ্ট একটি পদে একজন জনপ্রতিনিধির মাসিক যে একটি খরচ হয় তেমন একটি স্ট্যান্ডার্ড খরচ তাকে সম্মানী হিসেবে অবশ্যই দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, আপনি যদি তা (স্ট্যান্ডার্ড খরচ) না দেন, আর চারদিক থেকে এটা-ওটার জন্য চাপাচাপি করেন, তাহলে দিনশেষে তাকে অন্য কোনো না কোনো উপায় বের করতে হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আপনাদের শুধু একটি কথাই বলি, জনগণ এবং যারা জনগণের জায়গা থেকে কাজ করবেন, আমরা তাদের মধ্যে ব্রিজ হয়ে কাজ করতে চাই। আমরা তাদের কথাগুলো পুরো দেশের সামনে তুলে ধরতে চাই।
সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি আহ্বান জানাই। তা হলো পুরো বাংলাদেশের মানুষের নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, তাদের মনের ভেতর থেকে একটি প্রত্যাশা...আপনারা কে কোথায় যাবেন, সেটি আপনাদের বিষয়, কিন্তু মনে রাখবেন, আপনারা যদি সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে আগামীর বাংলাদেশে কাজ না করেন, তাহলে শেখ হাসিনার পরিস্থিতিটা একবার অনুমান করবেন। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি কাজ না করেন, তাহলে এক বছর, দুই বছর, পাঁচ বছর পার পেয়ে যাবেন কিন্তু তারপর পরিস্থিতি এবং অবস্থা তার (শেখ হাসিনা) মতোই হবে। তাহলে তার অবস্থাই যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের মতো ছোটখাটো মানুষের অবস্থান জনগণ কোথায় নিয়ে ফেলবে, তা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা আরও বিশ্বাস করি, দেশের মানুষকে সর্বোপরি বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সামনে রেখে আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যৌক্তিক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা এখানে যারা বসেছি, সবাই একটি বিষয়ে একমত নই। কাউন্সিলরদের পরিবর্তে যে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার নিয়োগ করা হবে, এই বিষয়ে আমরা একমত নই। এটি আমাদের স্পষ্ট অবস্থান। কারণ এই যে একটা আমলাতান্ত্রিক কাঠামো রয়েছে, এই কাঠামোয় আমাদের যে হাল চাষ করা ভাই আছেন, যে তাঁতি আছেন, কামার, কুমার, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, গার্মেন্টস কর্মী আছেন তারা এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় যেতে চান না। তারা যেতে চায় না বলেই তারা আপনাদের (কাউন্সিলর) নির্বাচিত করেছেন।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভদের দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের অভাব পূরণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতিনিধি এমন হবে, যার সঙ্গে আমার প্রতিদিন চায়ের দোকানে দেখা হবে, যার সাথে আমার বাজারে গেলে দেখা হবে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এমন সম্পর্কই আমরা চাই। তাই আমরা বলতে চাই, নয়টা-পাঁচটা অফিস করা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভদের দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের অভাব কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল করা এবং পরবর্তী বাংলাদেশ গড়তে আপনাদের (কাউন্সিলর) অবদান অপরিসীম। আপনারা এই বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন। আমরা যখন সবাই বাংলাদেশের পক্ষে থাকব তখন ভারতে বসে দালালরা, ফ্যাসিস্টরা যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, কখনোই কিছু করতে পারবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই আহ্বায়ক বলেন, আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে এমন রাজনীতি করবেন, যে রাজনীতি করলে ক্ষমতায় না থাকলেও পালিয়ে যেতে না হয়।
বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এমএমআই/আরএইচ