পঞ্চগড়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া পঞ্চগড়ের রিকশাচালক আল আমিনকে হত্যার পর মরদেহ গুমের মামলায় প্রধান আসামি সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ সাবেক এই রেলমন্ত্রীকে পঞ্চগড় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুললে আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এসময় শুনানিতে সরকার পক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ইয়াছিনুল হক দুলাল, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৪-৫ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন, আলী আসমান বিপুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে এদিন সুজনের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেননি। এছাড়া তিনি ১৬৪ ধারায় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেননি বলে জানা গেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমরা আজকে (সোমবার) আদালতে কোনো জামিনের আবেদন করিনি। জামিনের আবেদন মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আদালতে দেওয়া হবে। সুজন সাহেব সুস্থ আছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। আমরাও দেখেছি তিনি সুস্থ আছেন।
আদালত তার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, সুস্থ আছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলেও আদালতকে জানিয়েছেন। নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি যেই লেভেলে আছি। যেই লেভেলে আমার অবস্থান। সেই লেভেলে আমি কোনো ষড়যন্ত্র করলে সেটা হতে পারে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরসহ বড়দের সঙ্গে। কিন্তু একজন ইজিবাইকচালক তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। শুধু রাজনৈতিক কারণে আমাকে এই মামলায় আনা হয়েছে।
আমার সঙ্গে এই মামলায় সাবেক পঞ্চগড়ের এত এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। আমরা সবাই ষড়যন্ত্রের শিকার। শুধু আমি না আমাদের বিরুদ্ধে এইভাবে সারা দেশে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হচ্ছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। যেহেতু আমি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আদালত যেন আমার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করেন বলেও আদালতকে জানান।
সরকারপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ইয়াছিনুল হক দুলাল বলেন, বিগত দিনে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। আমরা বর্তমানে যেহেতু ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে চলছি। আসামির রিমান্ডের আগে ও পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এখন ন্যায় বিচারের উদাহরণ। পুলিশ যাতে আসামিকে কোনো টর্চার করতে না পারে বা টর্চার করে কোনো ধরনের উৎকোচ গ্রহণ করতে না সে বিষয়টি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদাহরণ। আজকে যেহেতু আসামিপক্ষ জামিনের আবেদন করেনি। সেহেতু আমরাও কোনো বিরোধিতা করিনি। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে, গত বছরের (২০২৪) ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই মামলায় হাজির করা হলে বিচারক মো. আশরাফুজ্জামান সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর একই মামলায় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে সাবেক এই রেলমন্ত্রীকে আদালতে তোলার পরে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়া। পরে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে রিমান্ড শেষে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদালতে তোলা হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুম হয় আল আমিন। এ ঘটনায় আল আমিনের বাবা মনু মিয়া গত ১০ই নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। অপর আসামিদের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভুঁইয়া মুক্তা, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পল্লব, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নোমান হাসান, সাধারণ সম্পাদক সাদমান সাদিক প্লাবন পাটোয়ারী, পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম, হাসনাত মো. হামিদুর রহমান, পঞ্চগড় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আল তারিক, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির উজ্জ্বলসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে সাবেক ওই মন্ত্রীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজনভ্যানে পুলিশের পাহারায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারে আনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৫
আরএ