ঢাকা: ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবু বকর সিদ্দিক শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলের গুলিতে নিহত হলেও জালিয়াতি করে এ হত্যার দায় এড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।
সম্মেলনে সংগঠনটি বলছে, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবু বকর হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই ১৪ বছর আগের ঘটনা হলেও এখন হত্যা মামলাটি দায়ের থেকে বিচার প্রক্রিয়ার সবকিছু পুনর্বিচার বা পুনরায় শুরু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু বকর হত্যার বিচার ও তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে নয় দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।
দাবিগুলো হলো- শহীদ আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলা পুনর্বিচার তথা শুরু থেকে মামলার আবেদন, অভিযুক্ত আসামি ও সাক্ষী নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; মামলায় শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমসহ হামলায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে আসামি করতে হবে।
শহীদ আবু বকর হত্যার সুপ্রিম রেসপন্সিবল অথরিটি হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইজিপি নুর মোহাম্মদ, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক ও রমনা জোনের ডিসিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ও প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম আবাসিক হলে পুলিশ প্রবেশ করিয়ে শহীদ আবু বকর সিদ্দিককে হত্যা ও অন্য ছাত্রদের নির্যাতনের পরিস্থিতি তৈরি করায় তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘর্ষে লিপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরসহ বিগত ১৬ বছর নির্যাতন-নিপীড়নে জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে।
শহীদ আবু বকরকে স্মরণে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে স্মৃতি মিনার তৈরি করতে হবে।
শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; তার পরিবারের সদস্যদের সরকারি খরচে ভিআইপি মর্যাদায় হজ করাতে হবে। পরিবারের সদস্যদের আজীবন ফ্রি চিকিৎসা ও গণপরিবহনে চলাচলের বন্দোবস্ত করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি ওয়ান ইলেভেনবিরোধী ছাত্রসংগঠন নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্লার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এরপর পুলিশ হলের কক্ষগুলোকে টার্গেট করে গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আত্মরক্ষা করতে শহীদ আবু বকর সিদ্দিকসহ ৪০৪ নম্বর কক্ষের ৮ বাসিন্দা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন ঠিক ওপরে পাঁচতলার ৫০৩ নম্বর কক্ষের বারান্দা থেকে পুলিশের গুলিতে আবু বকর সিদ্দিক গুলিবিদ্ধ হন।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শফিউল আলম মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, আবু বকর সিদ্দিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব ডা. মাসুম বিল্লাহ ও সদস্য মামুনুর রশিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান এবং বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৫
আরবি