ঢাকা: ভাষা আন্দোলনের চেতনা, আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের প্রতীক। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এ দিনটি শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমিত নয়; নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে তা প্রাণ পেয়েছে অনন্য এক আবেগে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই ভোরের কুয়াশা ভেদ করে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা এসেছে শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এই শিশুদের হাতে ফুল, মনে ভাষা শহীদদের জন্য ভালোবাসা।
একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ইসরাত জাহান তার ছাত্রদের নিয়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে।
তিনি বলেন, শিশুদেরকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানানো খুব জরুরি। ওরা এই দেশের ভবিষ্যৎ। শহীদদের আত্মত্যাগ ওদের মনে গেঁথে দিতে হবে।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান বলে, আমি টিভিতে দেখেছি, ওই দিন অনেক ছাত্র মারা গিয়েছিলেন বাংলা ভাষার জন্য। আজ আমি তাদের জন্য ফুল দিলাম।
কাঁধে করে ৭ বছরের শিশু ওসামাকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা মেহেদি হাসান বলেন, শহীদদের ত্যাগের মূল্য বোঝাতেই আমরা প্রতি বছর বাচ্চাদের নিয়ে আসি। তারা যেন জানে, এই ভাষার অধিকার স্বাভাবিক ছিল না। স্কুলের পাঠ্যক্রমে একুশের গল্প থাকলেও, মাঠে এসে ইতিহাস স্পর্শ করা অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
সকালে দুই মেয়ে ও ভাগিনাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে আসা রাজন ভট্টাচার্য বলেন, শহীদ মিনারে শিশুদের এই শ্রদ্ধা নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি একটি প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের হস্তান্তর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মতোই একুশের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের একটি ভিত্তি। শিশুরা যখন ফুল দেয়, তারা স্বীকার করে এই ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তারা ভবিষ্যতেও সোচ্চার থাকবে। তাই অভ্যাস তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে এখানে আসা।
এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের শ্রদ্ধা জানানোর পরে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
তখন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষরা একে একে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫
ইএসএস/এসআইএস