টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ‘শ্লীলতাহানি’ ঘটনার মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। একই সঙ্গে তাদের হেফাজতে থাকা লুণ্ঠিত টাকা, মোবাইলফোন, গহনা, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান তার সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার আমতলী গ্রামের খোরশেদ শেখের ছেলে আলমগীর হোসেন ও রাজীব হোসেন (২১)।
সম্মেলনে এসপি মিজানুর রহমান জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার পূর্বধলার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকা থেকে রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় রাজীবের হেফাজতে থাকা ১০টি মোবাইলফোন, নারী যাত্রীদের পাঁচ জোড়া চুরি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি এনআইডি, একটি এটিএম কার্ড, বাসের টিকেট ও ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তার করা হয় মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত (২৯), মো. সবুজ (৩০) ও মো. শরিফুজ্জামান শরীফকে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য এবং গুপ্তচরদের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী হলো আলমগীর হোসেন এবং সেকেন্ড ইন্ড কমান হলো শহিদুল ইসলাম মুহিত।
বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউনিক রয়েল আমরি ট্রাভেলস নামে বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি’র ঘটনা ঘটে। বাসটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল।
বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও দুই নারীর শ্লীলতাহানি করে ডাকাতরা।
১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এ সময় ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। ঘটনার তিন দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী মামলা করেন।
মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে এবং মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহিদুল ইসলাম মুহিত, সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে টাঙ্গাইলের এসপি মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, ‘ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় মামলা হওয়ার পরই আমাদের টিম মাঠে কাজ শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের একটি টিম সাভারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আলমগীর ও রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের নখদর্পণে চলে এসেছে। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আতিকুজ্জামানকে দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয়। এর আগে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়।
** চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ‘শ্লীলতাহানি’র তিন দিন পর মামলা
** বাসে ডাকাতি-‘শ্লীলতাহানি’: তিন ডাকাত গ্রেপ্তার, এএসআই বরখাস্ত
** চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি: পুলিশ সুপার
** বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি, ২ আসামির স্বীকারোক্তি
** বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: লুট করা মোবাইলের বিনিময়ে গাঁজা কেনেন ডাকাতরা
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
এসআরএস