সাতক্ষীরা: থাকার জায়গা নেই, ঘরে খাবার নেই, তাই ঈদের আনন্দও নেই সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চার গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেসে গেছে তাদের বসতভিটা।
ঘরবাড়ি হারিয়ে হরিষখালির বাঁধে আশ্রয় নেওয়া রুবেল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তাদের বাড়িঘর নিয়ে গেছে। এখন ভিটের ওপর দিয়ে প্রমত্তা খাল। কোথাও জায়গা না পেয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিই। এখানে যারা আছে তাদের আয় বলতে নদীতে মাছ ধরে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। তাই ঈদ নিয়ে বাড়তি কোনো উৎসাহ কাজ করে না বেড়িবাঁধে আশ্রিতদের মধ্যে।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মনোয়ারা বেগম জানান, প্রতিদিনের খাবার নিয়েই যেখানে অনিশ্চয়তা, সেখানে ঈদে ভালো খাবারের কথা চিন্তা করা অবান্তর।
তিনি বলেন, ছাবাল ভাটায় কাজে গে, এখনো বাড়ি আসেনি। ওর বাপ কামায় করতি পারে না। ঈদ নে চিন্তায় আছি, তিনটি ছোট ছোট পুতনি আছে তাগের নে।
বয়োবৃদ্ধ অজিয়ার রহমান বলেন, ঘরবাড়ি গাঙে গেছে। গাঙে মাছ মেরে খাই, সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই ঈদ নেও বাড়তি কোনো চিন্তানি।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতাপনগরের দরগাহতলা, হাওলাদার বাড়িসহ কয়েকটি গ্রামে আম্পানের দগদগে ক্ষত এখনো দৃশ্যমান। এসব গ্রামের মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরা উদ্যোগী হয়ে এমন চারশ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই খাদ্য সহায়তা কিংবা এমন সাহায্য সহযোগিতা এলে তাদের জীবন মান উন্নয়নে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। এখানে সরকারি উদ্যোগে যে গুচ্ছগ্রাম করা হয়েছে, সেখানকার অনেক ঘরে মানুষ থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে তালা মারা। আবার এমন অনেকে ঘর পেয়েছেন যাদের আদৌ ঘরের প্রয়োজন নেই। বিষয়গুলো তদারকি করে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে দ্রুততম সময়ে পুনর্বাসন করা দরকার। তাহলে ঈদের সময়ে তাদের অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ ঢালী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ে হাজারো পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বাকি পরিবারগুলো বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সরকারি সহায়তা বলতে ভিজিএফ, সুলভ মূল্যের চাল বা ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুনর্বাসনের চেষ্টা করলেও এ কাজে এখনো সফলতা আসেনি। পরিবারগুলোকে তাই নিতান্তই কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
এএটি