ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভিড়-ভোগান্তিতেও ভাটা পড়েনি ঈদ আনন্দে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
ভিড়-ভোগান্তিতেও ভাটা পড়েনি ঈদ আনন্দে

ঢাকা: ঈদের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত মানুষের চাপে গরমের অনুভূতির পাশাপাশি ছিল দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার ভোগান্তি।

তবে তাতেও ভাটা পড়েনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের ঈদ আনন্দে।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর সামরিক জাদুঘর, নভোথিয়েটার, জিয়া উদ্যান ও বিমান বাহিনী জাদুঘর ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেকই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যায়নি। ফলে ঢাকায় থেকে যাওয়া এসব মানুষেরা ঈদ আনন্দ করতে ভিড় জমাচ্ছেন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু নগরীতে নতুন করে বিনোদনকেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়ায় অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যেই ঈদ আনন্দ করতে হচ্ছে আগতদের।

সরেজমিনে এসব বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেউ গণপরিবহনে, কেউ রিকশায়, কেউবা ব্যক্তিগত গাড়িতে ঘুরতে এসেছেন। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধদের নিয়ে, কেউবা আবার একা। আগতদের মধ্যে সবচেয়ে উৎসুক দেখা গেছে শিশুদের।  

এদিকে দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আশপাশের সড়কে যানজট দেখা গেছে। সিগনালগুলোয় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ঘুরতে বের হওয়া এসব মানুষদের।

নভোথিয়েটার

প্রতি বছর ঈদের সময় বিজয়সরণীর নভোথিয়েটারে ঘুরতে আসেন ঢাকাসহ আশপাশের জেলার মানুষজন। এবার যেনো সেই চাপ অনেকগুন বেড়েছে। নভোথিয়েটার ঢুকতে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়েছে আগতদের। টিকেট কাটার সেই লাইনের পেছনের অংশ গিয়ে ঠেকেছে পাশের সামরিক জাদুঘরে প্রবেশের গেইট পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর যখন টিকেট পাচ্ছেন তখন তাদের মুখে যেনো বিজয়ের হাসি ফুটে উঠছে।

গরমে সন্তানদের কষ্টের কথা ভেবে এ বছর পাবনায় গ্রামের বাড়িতে যাননি বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হাফিজুর রহমান। তাই ঈদের সময় ফাঁকা ঢাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। নভোথিয়েটারের গেইটে দুই ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথা বলতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, গতকাল ধানমন্ডি লেকে ঘুরেছি। আজ নভোথিয়েটারে এলাম। দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। স্ত্রী লাইনে দাঁড়িয়েছে। এখনো টিকেট পায়নি।

কথা বলতে বলতেই টিকেট নিয়ে হাজির হয়েছেন তার স্ত্রী শান্তা ইয়াসমীন। তার চোখে তৃপ্তির হাঁসি। ঢাকা শিশু হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শান্তা বলেন, কষ্ট হলেও সন্তানদের নতুন একটি জায়গা দেখাতে পারবো। তারা অনেক খুশি হবে। আরো অনেক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল আজ। কিন্তু এখানেই সময় চলে গেছে। ঈদ উপলক্ষে নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষে আরো টিকেট কাউন্টারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি অনলাইনেই টিকেট কাটার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো বলে জানান তিনি।

সামরিক জাদুঘর

নভোথিয়েটারের মতো সামরিক জাদুঘরের টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ সারি না থাকলেও দর্শনার্থীর চাপ কম ছিল না। ট্যাংক, বিমানসহ সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস দেখতে সেখানেও মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে ছবি তুলছেন কেউ কেউ। কেউবা নিজেরাই মগ্ন সেলফি তোলায়।

ছয় মাসের ছোট শিশুকন্যা সানায়া ও স্ত্রীকে নিয়ে সামরিক জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন নাজমুল হক সাকিব। তারাও অন্যদের মতো স্মৃতিকে ধারণ করে রাখছেন মুঠোফোনে। নাজমুল বলেন, মেয়ের সাথে এটা প্রথম ঈদ। এটা আমার জন্য স্পেশাল। তাই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। গতকাল বের হইনি। আজ বের হয়েছি। একটু মানুষের চাপ থাকলেও নিজেরা সময় কাটাতে পারছি। ভালোই লাগছে।

জিয়া উদ্যান

জিয়া উদ্যানে সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় ছিল। দুপুরের পর সেই ভিড় আরো বাড়ে। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এই উন্মুক্ত উদ্যানে দর্শনার্থীদের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি।

উদ্যানের গাছের সমারোহে ঘুরতে ঘুরতেই মিলছে আইসক্রিম, চানাচুর, ফলসহ বিভিন্ন খাবার সামগ্রীর ভ্রাম্যমাণ দোকান। লেকের পাশে বসে সেসব খাবার উপভোগ করছেন অনেকে। কেউবা বসে গল্প করছে। উদ্যানের ফাঁকা জায়গায় ছোট শিশুরে খেলাধুলা, ছোটাছুটি করছে। জিয়া উদ্যানের বাইরে ছিল ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার সুযোগ। ১০০ টাকায় ১০ মিনিটের এই রাইডে উৎসাহ নিয়ে উঠছেন অনেকে।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে জিয়া উদ্যানে আসা আরিফুর রহমান খান বলেন, আত্মীয় স্বজন সবাই মিলে এসেছি। শিশুরা সবচেয়ে বেশি এনজয় করছে। ওরা তো ঘরবন্দি থাকে, তাই বাইরে এসে তারা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। তারা ঈত কি বুঝতে না পারলেও এটা যে একটা বিশেষ দিন সেটা বুঝতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।