গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় সৃষ্ট সংঘর্ষের পর কনের বাড়িতে আটক বরপক্ষকে উদ্ধার করতে গিয়ে দলবলসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পরে সেনা সদস্যদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হলেও ঘটনার তিন দিন পরেও বর সবুজ সরকারকে (২৮) উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
রোববার (৬ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত বর উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি হাজিপাড়ায় কনে পক্ষের জিম্মায় রয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাপরহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কনক কুমার গোস্বামী বলেন, এখন পর্যন্ত বর সবুজ মিয়া কনে পক্ষের জিম্মায় রয়েছেন। রোববার রাত ৮টার দিকে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বর সবুজ মিয়া মোবাইল ফোনে তার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় সবুজ সার্বিক পরিস্থিতির জন্য তৃতীয় পক্ষকে দায়ী করেন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, সবুজকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়াসহ সার্বিক বিষয়টি সমাধানের জন্য জোর চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এখনো কোনো সুফল মেলেনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রামজীবন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ওই গ্রামের প্রবাসী মো. দুখু মিয়ার মেয়ে দীপা বেগমকে বিয়ে করতে এসে আটক হন বরসহ কয়েকজন।
পরদিন শুক্রবার দিবাগত রাতে কনের বাড়িতে অবরুদ্ধ হওয়া বরপক্ষের লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিও অবরুদ্ধ হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পশ্চিম ছাপড়হাটি হাজিপাড়া গ্রামের প্রবাসী মো. দুখু মিয়ার মেয়ে দীপা বেগমের (১৮) সঙ্গে পাশের রামজীবন ইউনিয়নের মো. আয়নাল হকের ছেলে মো. সবুজ সরকারের বিয়ে ঠিক হয়। শুরু থেকেই গেটের টাকা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েন চলছিল। এরপর খাবার পরিবেশনের সময় ভাত নরম হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন বরপক্ষের লোকজন। একে একে তারা ভাতের প্লেট ছুড়ে ফেলেন, চেয়ার ভাঙচুর করেন।
কনের বাবার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা কনের জ্যাঠা পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে বরপক্ষের লোকজন তাবে মারধর করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অধিকাংশ বরযাত্রী পালিয়ে যান, তবে বরসহ কয়েকজনকে আটক করে এলাকাবাসী।
পরদিন শুক্রবার অবরুদ্ধ থাকা লোকজনের পরিবার সুন্দরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই ওসি মো. আবদুল হাকিম আজাদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উদ্ধার অভিযানে যায়। তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কনে পক্ষের লোকজন পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে ওসিকেও অবরুদ্ধ করে ফেলেন।
পরে তিনি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেখানেও তাকে ঘিরে রাখে কনে পক্ষের উত্তেজিত লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ওসি সাহেব ফোন করেছিলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে উত্তিজিত জনতাকে শান্ত করে ওসিসহ সবাইকে উদ্ধার করি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, বিয়ে বাড়িতে বরপক্ষের তিনজন আটকে ছিলেন। তাদের উদ্ধারে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। এ সময় তিনি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে ওই বাড়িটিও ঘিরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় বরের বাবা আয়নাল হক বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কনে দীপা বেগম ও মা মল্লিকা বেগমসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, কনের বাড়িতে আটক বরসহ অন্যদের ছাড়তে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। দাবিকৃত অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের ছাড়বে না কনেপক্ষ।
ওসি আরও জানান, বিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ বরপক্ষকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৫৫৯ জনকে আসামি করে পৃথক আরও একটি মামলা হয়েছে।
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
এমজেএফ