পাবনা (ঈশ্বরদী): গাজীপুরের সালনায় যাত্রীবাহী আন্তঃনগর চিলাহাটি এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ছয়টি যাত্রীবাহী ট্রেন আটকে রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ট্রেনগুলোর কয়েক হাজার যাত্রী।
নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলের দিকে ছেড়ে আসলেও ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ছে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো। এদিকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটের গাজীপুর-জয়দেবপুর রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী সালনায় নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেসের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনার কারণে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের বিভিন্ন রেলস্টেশনে আটকে পড়া ট্রেনগুলো হলো: পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ৭৫৭ নাম্বার দ্রুতযান এক্সপ্রেস টাঈাইলের মির্জাপুর থামিয়ে রাখা হয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে আসা ঢাকাগামী ৭৯৭ নম্বর কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস মহেড়া রেলস্টেশনে আটকা পড়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ফাইভ-ডাউন ট্রেনটি টঙ্গী রেলস্টেশনে, লালমনিহাট থেকে ঢাকাগামী ৭৫১ নাম্বার লালমনি এক্সপ্রেস টাঙ্গাইলে, ঢাকা থেকে আসা পঞ্চগড়গামী ৮৯৬ নম্বর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ইব্রাহীমবাদ, রাজশাহী থেকে আসা ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস পাবনার চাটমোহরে অবস্থান করছে।
এদিকে ছয়টি ট্রেনে রয়েছে ভ্রমণপ্রিয় কয়েক হাজার যাত্রী। তীব্র ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগে পড়েছে কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারী ও পুরুষ এবং বৃদ্ধ। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিকল্প পথ হিসেবে সড়কপথকে বেছে নিয়েছেন, আবার অনেকে ট্রেন কখন ছাড়বে সেই অপেক্ষায় ট্রেনেই রয়েছেন।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলমগীর আলম (৩৫) বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রবাসী, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া কর্মরত রয়েছি। ঈদে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম, আজ রাত ১২টায় আমার ফ্লাইট। রাজশাহী থেকে ট্রেনটি বিকেল ৫টায় ছেড়ে এসেছে। রাত ১০টায় ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল। আজ নাকি গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে এ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এমন একটা স্টেশনে পড়ে আছি, এখান থেকে সড়কপথে যাওয়ার উপায় নেই। আর সঙ্গে অনেক মালামাল রয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে যেতেও পারছি না, কখন ট্রেন ছাড়বে জানি না। নিদিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে না পারলে হয়তোবা আমার বিমানের টিকিট বাতিল হবে।
পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের সপরিবারে ঢাকায় যাচ্ছেন বেসরকারি চাকুরীজীবী রোমানা রহমান হৃদি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকায় ফিরছি। ট্রেনটি দুপুরে পঞ্চগড় থেকে ছেড়েছে। রাত ১০টার মধ্যে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছায়। আমাদের সঙ্গে কোন ছেলে মানুষ না না থাকায় কঠিন বিড়ম্বনার মধ্য পড়ে আছি। দীর্ঘ ৩-৪ ঘণ্টা ট্রেনের মধ্যে অস্বস্তি লাগছে। গরমে অস্থির লাগছে। বাড়ির কাছাকাছি থাকলে হয়তোবা যাত্রা বাতিল করা যেতো, মাঝামাঝি এসে আটকে আছি, বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করছি, কখন ছাড়বে ট্রেন?
পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে দুর্ঘটনার ফলে রেললাইন ও স্লিপার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরদী থেকে রিলিফ ট্রেনে করে রেললাইন সচল করতে সময় লাগছে। আমরা চেষ্টা করছি, খুব অল্প সময়ে ট্রেনগুলো চলাচল করবে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আহসান জাবীর বাংলানিউজকে জানান, বিকেল ৪টার দিকে ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ ও ডিজেল কারখানা থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন রওয়ানা হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে পৌঁছেছে। লাইনচ্যুত হওয়া বগিটি উদ্ধার করে রেললাইন সচল করতে আরও প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।
দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার ভ্রমণ প্রিয় ট্রেনের যাত্রীরা। এতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো গন্তব্যস্থল পৌঁছাতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রত্যাশা করি না। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত চেষ্টা করছে রেললাইন সচল করতে বলেও জানান ডিআরএম আহসান জাবীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
আরআইএস