ঢাকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ। শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৪ টা ৪৫ নাগাদ বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
এসময় তারা ‘ব্যান আওয়ামী লীগ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, মুজিববাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’সহ নানা স্লোগান দেন।
এর আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পাশের মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন দেওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
একইসঙ্গে তিনি শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন। হাসনাত আবদুল্লাহর ঘোষণার পর উপস্থিত আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন এবং বিকেল ৪ টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ করেন। এ সময় এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপি নেতা আশরাফ মাহাদীর কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার (৯ মে) দুপুর পৌনে তিনটার দিকে এই সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, অভ্যুত্থানের এতদিন পর আমাদের বোঝাতে হচ্ছে কেন নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে কোন কারণে রাজনৈতিক দল মনে হয়?
তিনি বলেন, (নিষিদ্ধের বিষয়ে) প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। অধ্যাপক ইউনূস, আলোচনা করতে হবে শহীদ ওয়াসিমের মায়ের সঙ্গে, আবু সাঈদের বাবার সঙ্গে, মুগ্ধের ভাইয়ের সঙ্গে। যাদের রাজনৈতিক কারণে (হাসিনার সরকার) তুলে নিয়ে গিয়েছে, তাদের সঙ্গে। ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তারা ১৯৭৪ সালে বাকশাল কায়েম করে এদেশে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। সারাদেশে সন্ত্রাস কায়েম করে জাসদের ৩০ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছিল। ১৯৭৪ সালে লুটপাটের কারণে ১৫ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।
তিনি বলেন, ইতিহাসের পরতে পরতে তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে। তারা ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০০৯ সালে ভারতের সহায়তায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।
১০০ ফেরাউন ও নমরুদকে একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন হাসনাত।
নরেন্দ্র মোদীর বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে হাসিনা দেশ পরিচালনা করেছেন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা দেশের হিস্যা মানুষের কাছে তুলে দিতে চাই। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আরও যদি একবছর সময় প্রয়োজন হয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ব না।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ থেকে পালান দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। দলটির উচ্চ পর্যায়ের বহু নেতাও সেই সময় থেকে পলাতক। এরপরও আওয়ামী লীগ দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত বলে অভিযোগ করে আসছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছেন তারা। অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তাদের বিচার দাবিতে সোচ্চার অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছাত্র-জনতা।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণের দাবি অনেকের। আর বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে আওয়ামী লীগ আমলের দুইবারের রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবরে দলটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরদার হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টায় যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে এনসিপি। সেই কর্মসূচি এখন শাহবাগ অবরোধের দিকে মোড় নিয়েছে।
আরও পড়ুন>>আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ার ঘোষণা, শাহবাগ অবরোধ
এফএইচ/এসএএইচ