ঢাকা, বুধবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৮ মে ২০২৫, ০০ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: প্রথম সংস্কারেই নজিরবিহীন জটিলতা

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:২২, মে ২৭, ২০২৫
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: প্রথম সংস্কারেই নজিরবিহীন জটিলতা ফাইল ফটো

ঢাকা: সরকারি চাকরিজীবীদের প্রবল আপত্তির মুখে অনেকটা তড়িঘড়ি করে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদ করে আসছিলেন চাকরিজীবীরা।

কিন্তু অধ্যাদেশ জারি করায় জটিলতা প্রকট হয়েছে।  

সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি সিভিল প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ বাতিল ছাড়া অন্য পথ নেই। ফ্যাসিবাদী কায়দায় সরকারি চাকরিজীবীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো কালো ও জংলী আইন।

তবে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রোববার (২৫ মে) রাতে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার।

এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের পর থেকেই তা বাতিলে গত কয়েকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অধ্যাদেশ জারির পরদিন সকাল থেকেই সচিবালয়ে ছয় নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় জড়ো হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওইদিন সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ এবং জমায়েত করতে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ এবং সব স্তরের কর্মচারীদের একাট্টা আন্দোলন নিয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, এই অধ্যাদেশ জংলী আইন। সংবিধানবিরোধী, মৌলিক অধিকারবিরোধী। সরকারি কর্মচারীরা অপরাধ করলে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য অনেক আইন আছে। সব জায়গায় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারপরও এই অধ্যাদেশ জারির যৌক্তিকতা আমার বোধগম্য নয়।  

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ চার ধরনের অপরাধের জন্য সরকারি কর্মচারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এগুলো, অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা দায়িত্বে গাফিলতি, অন্যদের উসকানি দেওয়া বা কর্তব্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা এবং অন্যদের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া। এই চার অপরাধের জন্য নিম্নপদে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের শাস্তি দেওয়া যাবে। কিন্তু আপিল করার পথ প্রশমিত করা হয়েছে।  

অধ্যাদেশ নিয়ে আবু আলম শহিদ খান বলেন, ১৯৭৯ সালের মার্শাল ল’র সময়ে একটা অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছিল। সেটা আবার ২০১৮ সালে (সরকারি চাকরি আইন) ফিরে আনা হয়। যাকে আমরা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার বলি, সেটা ফিরে এনেছে। এই জংলী আইনকে ফিরিয়ে এনে সরকারি কর্মচারী আইনের সাথে যুক্ত করার কী কারণ আছে সেটা আমার বোধগম্য নয়।  

তিনি বলেন, জংলী আইন নতুন করে আইনের সাথে সংযুক্ত করা হচ্ছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। এই কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সরকারের উচিত অন্যান্য কালাকানুন বাতিল করা। সরকার তার কমিটমেন্টের ধারের কাছে না যেয়ে কালাকানুন করেছে। এতে ১৮ লাখ কর্মচারী সাফার করবে।  

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ মে) মাঠ নামবে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।  

ফোরামের সদস্য সচিব কাজী মেরাজ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের আইন তো জংলী আইনের চেয়েও খারাপ। সংবিধানের কোথাও নেই সাজা দিলে আদালত বা কোথাও যেতে পারবে না। তাহলে কি জঙ্গলে যাবে? এটা সংবিধানবিরোধী অধ্যাদেশ। কোনো সভ্য দেশে সভ্য মানুষ বলতে পারে যে তোমাকে সাজা দেবো তুমি কোথাও যেতে পারবে না? এটি ন্যায়বিচার পরিপন্থি, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি একটা আইন। সেজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন বলে আমি মনে করি।

অধ্যাদেশকে কালো ও জংলী আইন উল্লেখ করে সব পক্ষের কর্মচারীরা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছেন। এখন থেকে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন মিলে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ নামে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।  

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় সমবেত হবেন তারা।  

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ‘কালো’ আইন বা অধ্যাদেশ সম্পূর্ণরূপে বাতিল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। এই আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে চলমান কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।  

২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করা হয়। অধ্যাদেশটিতে চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুতের বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান শিরোনামে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে সরকারি কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, এর কারণে অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে আনুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।