ঢাকা, বুধবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৮ মে ২০২৫, ০০ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২০, মে ২৭, ২০২৫
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া: ঢাকার অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।

কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন ও ১০ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

কুষ্টিয়া শহরের বাসিন্দারা জানান, ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কালীশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের পাশের একটি তিনতলা বাড়ি ঘিরে রাখেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর কমপক্ষে পাঁচটি গাড়ি অভিযানে অংশ নেয়। ওই বাড়ির নিচতলা ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান চালানো বাড়িটি স্থানীয় মীর মহিউদ্দিনের মালিকানাধীন। বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মেস ভাড়ায় থাকেন।

কুষ্টিয়ার সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুল আলম জানান, ঢাকার টিম দুজনকে গ্রেপ্তার করে রাজধানীতে নিয়ে চলে গেছে। কুষ্টিয়ায় তাদের কাছে তথ্য নেই।

সুব্রত বাইন কে
সুব্রত বাইনকে বলা হয় ঢাকাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘গ্যাং কিলিং মাস্টার’। রাজধানী ছাপিয়ে বিভিন্ন জেলায় তার খুনের অভিযোগ আছে। তার নামে কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের খবর আছে অজস্র। তার অপরাধের পরিধি শুধু দেশের সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও একদা তৎপর ছিলেন সুব্রত বাইন।

জানা যায়, ১৯৮৭ সাল থেকে মগবাজারকেন্দ্রিক আন্ডারওয়ার্ল্ডে বিচরণ করতে শুরু করেন সুব্রত বাইন। রফিক নামে একজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনাখুনিতে জড়ান সুব্রত। এরপর একে একে ট্রিপল, ডাবল মার্ডারের অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে।

আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, আন্ডারওয়ার্ল্ডে সুব্রত বাইনের আবির্ভাবের পর গ্যাং কিলিংয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। মূলত সুব্রত বাইনই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘গ্যাং কিলিং’ প্রবণতা বাড়াতে ভূমিকা রাখেন। মুরগি মিলন নামে এক সন্ত্রাসী খুন হওয়ার পর এই অভিযোগ মাথায় নিয়ে সুব্রত বাইন দেশ ছেড়ে পালান। আত্মগোপন করেন কলকাতায় আত্মগোপন। পরে সেখানেও অপরাধে জড়ালে ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।  

এক পর্যায়ে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেপাল ভ্রমণ করে সেসব দেশের অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। ওই সময় ভারত সরকার তার নামে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করে। নেপালে আত্মগোপনে থাকাকালে ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন সুব্রত। তবে ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর তিনি দেশটির কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ কেটে পালান। পরে অবশ্য আবার কলকাতায় গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তাকে দেশে ফেরাতে ভারতের সঙ্গে একাধিকবার বাংলাদেশ সরকার চিঠি চালাচালি করে।

কারাগারে বা বাইরে, যেখানেই থেকেছেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী, তার নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

সুব্রত বাইনের বাবা গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা বিপুল বায়েন এবং মা কুমুলিনি বায়েন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। পারিবারিক জীবনে তার একাধিক বিয়ের খবর পাওয়া যায়।

‘কিলিং মেশিন’ মাসুদ
১৯৯৭ সালে রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা সংলগ্ন সড়কে মামুন নামে একজনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন মাসুদ। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি পরিচিত মোল্লা মাসুদ নামে। অপরাধ জগতে ‘কিলিং মেশিন’ হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়। তিনি সুব্রত বাইনের সেকেন্ড ইন কমান্ড।

মাসুদের বাড়ি ঝালকাঠির মহাদেবপুর। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। বাসা ঢাকার রমনার মিরবাগে। সুব্রত বাইনের মতো মোল্লা মাসুদের নামেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ রয়েছে। বহু অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মোল্লা মাসুদ ২০০৪ সালে ঢাকায় ক্রসফায়ারের ঘটনা বেড়ে গেলে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকেই মাসুদ বড় বড় ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা হুন্ডির মাধ্যমে চাঁদার টাকা তার কাছে পৌঁছে দিতেন।

কলকাতায়ও অপরাধে জড়ালে মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করে সেখানকার সিআইডি। তখন দিল্লি থেকে বিষয়টি জেনে তাকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় ঢাকার সরকার।

আরএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।