ঢাকা, বুধবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

জাতীয়করণ দাবিতে আন্দোলন, সচিবালয়ে গেলেন ১২ শিক্ষক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৩, আগস্ট ১৩, ২০২৫
জাতীয়করণ দাবিতে আন্দোলন, সচিবালয়ে গেলেন ১২ শিক্ষক প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। ছবি: বাংলানিউজ

জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা স্থগিত করেছে। পদযাত্রার পরিবর্তে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয় গেছেন ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে জাতীয়করণ, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা—এই ৫ দাবিতে মহাসমাবেশে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। বেলা সাড়ে ১২টার পর এই প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে যান।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিগুলো জানিয়ে আসছিলেন। ২০১৮ সালে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টাও আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই।  

তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। অথচ আমরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।

কুমিল্লা থেকে আসা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য আমাদের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সচিবালয়ে গিয়েছেন। আমরা এখানে তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি। নিশ্চয়ই শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে আমাদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসবেন।

চাঁদপুর, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, সিলেট, নরসিংদী, মাদারীপুর, বগুড়াসহ অন্যান্য জেলার সমন্বয়কারীরা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। চাকরি করেও শিক্ষকরা ঋণগ্রস্ত সবাই। এবার হয় দাবি আদায় করব, না হয় মরব। উপদেষ্টারা কথা রাখেননি। উনি সবার দাবি মানলেও শিক্ষকদের দাবি না মেনে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। সরকারকে আজকের দিন আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে—যদি দাবি না মানা হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

শিক্ষকরা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, আসুন দেখুন আমাদের কান্না। আমাদের জীবন-যৌবন সব শেষ হয়ে গেছে। বিগত দিনের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকে আহত হয়ে পড়ে আছেন।

ঢাকার সমন্বয়কারী বলেন, আমি আমার অধিকার চাইতে এসেছি, পাওনা নিতে এসেছি। আমরা শিক্ষক। তারা যে সম্মানী পাচ্ছি তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না। আমরা জাতীয়করণের আওতায় আসতে চাই। দাবি না হলে ক্লাসে যাব না, মাঠ ছাড়ব না। আমাদের দাবি মানতে হবে।

‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৮ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের পর তৎকালীন সরকার ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিল। তখন প্রতিশ্রুতি ছিল পরবর্তী মেয়াদে জাতীয়করণের। তবে আগের সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষা উপদেষ্টা বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২২তম দিনে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বাজেটে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়। বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এজন্য জোট ১০ আগস্টের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছিল, অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা।

এদিকে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং পদযাত্রা ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঘোষণা করেছে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয়, প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর প্রবেশ গেট এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সামনে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ।  

ডিএইচবি/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।