ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

নামমাত্র মূল্যে ইজারা সিসিকের ৬ পশুর হাট, নেপথ্যে আ.লীগ নেতারা!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪১, মে ২৯, ২০২৫
নামমাত্র মূল্যে ইজারা সিসিকের ৬ পশুর হাট, নেপথ্যে আ.লীগ নেতারা!

সিলেট: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৭টি পশুর হাট ইজারা দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সেই পুরোনো প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে এবারও পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট করে নামমাত্র মূল্যে ৭টি পশুর হাটে ৬টি লিজ নেওয়া হয়েছে। ইজারার নেপথ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা রয়েছে বলে ধারণা। তবে সিন্ডিকেটের বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত নয় সিসিক কর্তৃপক্ষ।

সিসিক সূত্র জানায়, অস্থায়ী ৬টি পশুর হাটের দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় সিসিক কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৭ মে) বেলা আড়াইটায় নগর ভবনের কনফারেন্স কক্ষে সকলের উপস্থিতিতে টেন্ডার (দরপত্র) বক্স খোলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার, প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খানে। সচিব আশিক নূর সকলের উপস্থিতিতে টেন্ডার বক্স উন্মুক্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি সকল দরদাতাদের বিস্তারিত সকলের সামতে তুলে ধরেন।

তাতে দেখা যায়, ৫৯ জন দরপত্র কিনলেও ১৮টি দরপত্র জমা পড়েছে। তাও একটি দরপত্র খালি (ব্ল্যাংক) এবং আরেকটি পে-অর্ডার ছাড়া জমা পড়েছে।

নিয়মানুসারে সর্বোচ্চ দরদাতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাটের ইজারার কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হবে।  

টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন অস্থায়ী হাট। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলটির প্রভাবশালী নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ২০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের কবজায় ছিল। তাকে পাশ কাটিয়ে এই হাট নেওয়ার দুঃসাহস ছিল না কারো। এবার হাটটি ইজারা নিতে ২২টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৩টি। মো. তছরিম উদ্দিন এক লাখ ৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা এবং সর্বনিম্ন  জাকির আহমদ ৫০ হাজার টাকা দর জমা দেন। গত বছর হাটটি এক লাখ টাকায় ইজারা দেয় সিসিক।

আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিরাপাড়া সংলগ্ন পশুর হাটের ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা দরদাতা জাকির হোসেন পারভেজ হাটের ইজারা পান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দরদাতা ছিলেন জে.এ তোফায়েল ও মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। এই বছর এই হাটটি প্রথমবারের মতো ইজারা প্রদান করা হয়।

মেজরটিলা  বাজার সংলগ্ন অস্থায়ী হাট নিতে ৮টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে ৩টি। একজনের দরপত্র ব্ল্যাংক (খালি) ছিল এবং অন্যজনের দরপত্রে কোনো পে–অর্ডার না থাকায় একক দরদাতা হিসেবে মো. মাহি উদ্দিন ৫০ হাজার টাকা দর জমা দেন। গত বছরও এই হাটটি নামমাত্র ৫০ হাজার টাকা মূল্যে ইজারা যায়। নেপথ্যে থেকে হাটটি ইজারা নেন আত্মগোপনে থাকা আলোচিত জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম। ধারণা করা হচ্ছে, এবারো পলাতক জাহাঙ্গীর রয়েছেন এই হাট নেওয়ার নেপথ্যে!  

টুকের বাজার তেমুখি অস্থায়ী হাটের ৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও মাত্র ২টি জমা পড়ে। খালেদুর রহমান সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকায় বাজারটি ইজারা নেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দর দেন জনৈক মাসুক মিয়া। গত বছর এই হাটটি ২ লাখ টাকায় ইজারা যায়।  

কেবল মাছিমপুর কয়েদির হাটের ১২টি দরপত্র বিক্রি হলেও ৫টি জমা পড়ে। ফেরদৌস হোসেন নামের এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় এটি ইজারা নেন। এই হাটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দরদাতা মিজানুর রহমান। গত বছর এই হাটের ইজারা মূল্য ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কতিপয় নেতাকর্মীর কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই হাট থেকে রাজস্ব হারায় সিসিক। এবছর  ভ্যাট-ট্যক্স বাদেও প্রায় ৬ গুণের বেশি ইজারা মূল্য পায় সিসিক।

শাহপরান (রহ.) বাজার সংলগ্ন খালি জায়গার জন্য ৫টি  দরপত্র বিক্রি হলেও ২টি জমা পড়ে। সর্বোচ্চ  ৮০ হাজার টাকা দরদাতা হিসেবে গৌছ উদ্দিন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হন দুলাল আহমদ। তিনি ৭০ হাজার টাকা দর জমা দেন। গত বছর এই হাটটি  ৭০ হাজার টাকায় ইজারা দেয় সিসিক।

এছাড়া টেন্ডার ছাড়াই দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেয় সিসিক। বিগত দিনের আনুপাতিক হিসাব ধরে আনিকা ট্রেডিংকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ লাখ ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে পশুর হাট বসানোর জন্য মাসিক সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ইজারা প্রদান করে সিসিক।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা নেপথ্যে থেকে লোকজন দিয়ে অনেক হাটের ইজারা নিয়েছেন। তাছাড়া দরপত্র ৫৯টি বিক্রি হলেও জমা না পড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রতিটি পশুর হাটে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। যে কারণে দরপত্র সেভাবে জমা পড়েনি।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, দরপত্রে সিন্ডিকেট করা হলো কিনা, জানি না। হয়তো সিন্ডিকেট করে জমা দিতেও পারে। তবে আমরা গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে দরপত্র আহ্বান করে হাট ইজারা দিয়েছি। আর দক্ষিণ সুরমার ট্রাক টার্মিনালের হাটটি ৩ অ্যালাইনমেন্টের করা। তাই সেভাবে ইজারা দিয়েছি।   

সিসিকের সচিব মো. আশিক নুর বলেন, আমরা দরপত্র আহ্বান করে হাটগুলো ইজারা দিয়েছি। আশানুরূপ দরপত্র না পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষ হয়তো হাট ইজারা নিতে আগ্রহী না। তাই এরকম হয়েছে। তবে সিন্ডিকেট হয়েছে কিনা জানি না। অবশ্য আমাদের জায়গা থেকে আমরা ঠিক আছি।   

এনইউ/এসএএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।