বাংলাদেশে ফ্রান্সের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিচ্ছেন জঁ-মার্ক সেরে-শারলে। তিনি মারি মাসদুপুইয়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ‘সেরে-শারলে একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক, তিনি বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেবেন। ’
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন নয়। দেশটির স্বাধীনতার পর থেকেই ফ্রান্স ছিল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তরণপর্বে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও জনআস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এ সময়ে, ফ্রান্সের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
নতুন রাষ্ট্রদূতের আগমন তাই এ বন্ধুত্বে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফ্রান্সের রয়েছে দৃঢ় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক। নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অর্থনীতিবিদ দীর্ঘদিন ধরেই ফরাসি সমাজ ও রাজনীতিতে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
জঁ-মার্ক সেরে-শারলে ফ্রান্সের মর্যাদাপূর্ণ প্রশাসনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইকোল ন্যাশনাল ডি'অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের স্নাতক। বর্তমানে তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে ফ্রান্সের কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন (অক্টোবর ২০২১ থেকে)।
২০ বছরেরও বেশি কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সংক্রান্ত বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি ছয় বছর ফ্রান্সের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মস্কোতে রাজনৈতিক উপদেষ্টা, রোমে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা, প্যারিসে সংস্কৃতিমন্ত্রীর কূটনৈতিক উপদেষ্টা এবং ২০১৩–১৫ সালে নয়াদিল্লিতে উপমিশনপ্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।
তিনি মারি মাসদুপুইয়ের স্থানে যোগ দিচ্ছেন। মাসদুপুইয়ের সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল। বিরোধীদলগুলো তাকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আগের সরকার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেছিল। এমনকি ২০২৩ সালে একটি ভুয়া রিপোর্ট শেয়ার করায় তাকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল। যা পরে এএফপি যাচাই করে ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে।
ফ্রান্সের বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, ‘আমরা আগের রাষ্ট্রদূতের কথা ভুলে যেতে চাই—এটি একটি নতুন শুরু। ’
বাংলাদেশ যখন একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, তখন জঁ-মার্ক সেরে-শারলের আগমন ফ্রান্স–বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সম্পর্ক হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্মান এবং দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের ভিত্তিতে গড়া।
আরআইএস