ঢাকা: বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, আমরা কখনো ডিফেন্স ও ডিপ্লোম্যাসিকে গুরুত্ব দিইনি। স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকতে চাইলে এই দুইটি জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ধারাবাহিক আয়োজন ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’-এর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান।
শুরুতেই তিনি বলেন, সংস্কার শব্দটি এখন একটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনো টানাপোড়েনের মধ্যে আছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখাটাও জরুরি।
বক্তব্যে হুমায়ুন কবির বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ হয় সরকারের ভেতর থেকে, কিন্তু বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ঢাকা শহর। এখান থেকেই সব সিদ্ধান্ত হয় এবং এখানেই শেষ। আমাদের অন্তর্মুখিতা আমাদের সীমিত করে রেখেছে। বাইরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না, আবার নিজেদের সম্ভাবনাও বাইরে রপ্তানি করতে পারছি না।
তিনি বলেন, সহমতের অভাব আমাদের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি। আইডেন্টিটি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি-এই তিনটিকে মানুষের চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করে যদি পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা যায়, তাহলে তা শক্তিশালী হবে।
তার মতে, কূটনীতিতে ডিজিটাল কৌশল ব্যবহার করার সময় এখন। তিনি জানান, গত ৫৪ বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে মাত্র দুটি কমিশন হয়েছে, যা খুবই অপ্রতুল।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ফ্যাসিজম একটি ইকোসিস্টেম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাতে হবে। শুধু আমলা দিয়ে হবে না, ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টরকে যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসি, সাইবার নিরাপত্তা, পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ-এসব খাতে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আরও সক্রিয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশ একটি আমদানি-নির্ভর অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতায় সার্কের বিকল্প নেই।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের এখন ভারতের ওপর বেশি নির্ভরতা রয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। পররাষ্ট্রনীতিতে সততা ও বাস্তবতার ভিত্তিতে এগোতে হবে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবিনি। বিশেষ করে পানি ও ভিসা ইস্যুতে বিকল্প ভাবনার অভাব আছে।
আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, জনগণের ট্যাক্সের অর্থ কোন প্রকল্পে ব্যয় হবে তা ঠিক করার অধিকার জনগণেরই থাকা উচিত। তিনি বলেন, ডায়াস্পরা কমিউনিটিগুলোর প্রতিনিধিত্ব জাতীয় সংসদে থাকা উচিত।
বিদেশনীতি নির্ধারণে জনস্বার্থের অগ্রাধিকার
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাহাদী আমিন, পারভেজ করিম আব্বাসী, এম শফিউল্লাহ, মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ববি হাজ্জাজ, সাফকাত মুনির, এম এস সেকিল চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর, ও ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
তারা প্রত্যেকে তাদের বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ যদি স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করতে চায়, তবে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে, ডিপ্লোম্যাটদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রবাসীদের সুরক্ষা, কূটনৈতিক কাঠামোর সংস্কার ও প্রযুক্তিনির্ভর কূটনীতির ওপর জোর দিতে হবে।
টি আর/এসআইএস