ঢাকা, সোমবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

আদালতে বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের দায় স্বীকার

টাকার লোভ সামলাতে পারিনি

মাসুদ রানা, সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ |
আপডেট: ০৮:৫৮, আগস্ট ৪, ২০২৫
টাকার লোভ সামলাতে পারিনি রিয়াদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। গত ২৭ জুলাই ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলার আসামি তিনি।

মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল রবিবার আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। জবানবন্দিতে নিজের চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

তিনি জবানবন্দিতে বলেন, আমি গরিবের ছেলে। আমি টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।

এর আগে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আক্তারের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গত ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার হন রিয়াদ। পরে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জবানবন্দিতে আসামি রিয়াদ জানান, বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী লোকজন গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। গত ১৭ জুলাই রাতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর ফোনের মাধ্যমে গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি ডিসিকে জানান, গুলশান থানার সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। পরে ডিসি নিজে জানান যে, বিষয়টি তিনি গুলশান থানার ওসিকে অবগত করেছেন।

এরপর রাত ২টার দিকে তিনিসহ মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউন সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ ও আতিকের সঙ্গে কয়েকজন মিলে থানায় যান। তখন ওসি জানান, এত রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান চালানো যাবে না এবং ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরে গুলশান থানার একটি টিম তাঁদের সঙ্গে দেওয়া হয়। এরপর তার (রিয়াদ) নেতৃত্বে একটি দল শাম্মীর বাড়িতে যায়। গুলশানের থানার ওসি (তদন্ত) নিজে অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

তবে শাম্মীকে বাসায় না পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় তারা ফিরে আসেন। জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, জানে আলম অপু ওই বাসা থেকে শাম্মীর এয়ারপড নিয়ে আসেন। পরে তারা দুজন ওই দিন সকাল ১০টায় এয়ারপড ফেরত দিতে ওই বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তারা এয়ারপড ফের‍ত দেন। তখন অপু পানি খাওয়ার কথা বলে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। অপু বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে বলেন, শাম্মী বাসায় আছেন। আমরা তাকে পুলিশে দিয়ে দেব। তখন আবু জাফর ভয় পেয়ে তাদের টাকা অফার করেন। তখন অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা বাসায় নেই বলে জানান তিনি। পরে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তারা চলে আসেন। ওই টাকা দুজন সমান ভাগ করে নেন।

গত ২৬ জুলাই বিকেলে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানকে ওই বাসায় পাঠান। পুলিশ তাকেও ওই বাসায় যেতে বলেন। তখন পুলিশের কথায় ওই বাসায় যান। তখন পুলিশ এসে টাকাসহ হাতেনাতে আমাদের গ্রেপ্তার করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

এছাড়া অন্য তিন আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্যরা হলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তাঁদের সংগঠন থেকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে।  

এর আগে গত ২৭ জুলাই রিয়াদসহ চার আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ওই দিন আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু মো. আমিনুল ইসলামকে গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ ছাড়া এ মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গত ২ আগস্ট আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  

এর আগে গত ২৬ জুলাই রাত সাড়ে ১২টায় ভুক্তভোগী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। এতে তিনি ছয়জনকে আসামি করেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।