রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ যেন আজ এক বিশাল মিলনমেলা। ‘ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’র এক বছরপূর্তি উপলক্ষে সকাল থেকেই এখানে মানুষের ঢল নেমেছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে থেকেই বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি ও পেশার মানুষ আসতে শুরু করেন প্রিয় পতাকা হাতে, কেউবা শিল্পীদের গান শোনার আশায়। সবার চোখেমুখে বিজয়ের উজ্জ্বল স্মৃতি আর আগামীর স্বপ্ন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, জনসমাগম সামলাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দুই প্রান্তে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। খামারবাড়ি মোড় থেকে আগারগাঁও ও মিরপুরমুখী যানবাহনকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিকল্প পথে। সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত।
মণিপুরীপাড়ার বাসিন্দা সামিয়া আক্তার এবার এসেছেন জমজ কন্যা আয়রা ও আজোয়াকে নিয়ে। তার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। বলেন, গত বছর ফার্মগেটে আন্দোলনে ছিলাম। এবার এসেছি প্রিয় শিল্পীদের গান শুনতে। আশা করি, আমাদের সন্তানরা এক নিরাপদ বাংলাদেশ পাবে।
বনানী থেকে স্ত্রী ও সন্তানসহ আসা ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমানের ভাষায়, গত বছর স্বৈরাচারকে দেশ ছাড়াতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। আজ ৫ আগস্ট— সেই বিজয়ের প্রথম বার্ষিকী! সরকারকে বলবো, জনগণের আশা পূরণে জুলাই চেতনাকে সামনে রেখে এগোতে হবে।
দুপুর ১টার দিকে দেখা গেল, জনতার সুবিধার্থে পাঁচটি মোবাইল টয়লেট ইউনিটে ৪০টি শৌচাগার বসানো হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য একাধিক বড় ট্যাংক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনসহ নানা প্রতিষ্ঠান বসিয়েছে খাবারের স্টল।
মূল মঞ্চ ছাড়াও অ্যাভিনিউজুড়ে বসানো হয়েছে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিন। সংসদ ভবনের মূল গেটে চলছে লাইভ স্ক্রিন শো এবং গেম শো। সবচেয়ে বেশি ভিড় ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দৌঁড়ানি’ প্রতীকী খেলায়। হাসিমুখে মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, দুধের স্বাদ ঘোলে মিটলো। এবার হাসিনাকে ট্রেডমিলে ধাওয়া করে বেশ মজা পাচ্ছি!
কলেজ শিক্ষার্থী ফাহমিদ হোসেন তার অভিব্যক্তি লুকোতে পারলেন না। তিনি বলেন, হাসিনা বলেছিল, ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। কিন্তু এখন তো পালিয়েছে! তাই তার মিমিক্রির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।
আজকের মানিক মিয়া শুধু একটি অনুষ্ঠানস্থল নয়, এটি রূপ নিয়েছে এক গণউৎসবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল অতীতের ইতিহাস নয়, এটি হয়ে উঠেছে চলমান চেতনার প্রতীক। যেখানে মিলেছে জনতার প্রত্যাশা, প্রতিবাদ আর প্রজন্মের নতুন স্বপ্নের মেলবন্ধন।
এমএমআই/এমজে