রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ জন্য নীতিগত সংস্কার, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও লজিস্টিকস ব্যবস্থার উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
প্রশ্ন : ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পষ্টতা এসেছে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি বার্তা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো দেশে বিনিয়োগ প্রবাহ মসৃণ হয় না। দীর্ঘদিন অনিশ্চয়তা থাকলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকেন, যার প্রভাব পড়ে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয়েও।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিনিয়োগ ও ব্যবসার গতি বাড়বে, নাকি উদ্যোক্তারা নতুন সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে?
উত্তর : নির্বাচনের আগে কিছুটা গতি আশা করা যায়।
তবে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এখনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণেই থাকবেন। চূড়ান্ত বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত তাঁরা নেবেন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে—কোন দল ক্ষমতায় আসছে, তাদের অর্থনৈতিক দর্শন কী এবং তারা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রশ্ন : কোন নীতিগত পদক্ষেপে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন?
উত্তর : শুধু সময়সূচি ঘোষণা যথেষ্ট নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো সহিংসতা না হয়।
আইনের শাসন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দমনের ওপর জোর দিতে হবে। অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পুরনো ব্যাবসায়িক আইনগুলো, যেমন—কম্পানি আইন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেটরি অ্যাক্ট, কাস্টমস অ্যাক্ট ইত্যাদি আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার ও সংস্কার পরিকল্পনা কতটা গুরুত্ব পাবে বলে আপনি আশা করছেন?
উত্তর : রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তাদের ইশতেহারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য পরিকল্পনাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারে। নির্বাচনী রোডম্যাপ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক বার্তাও বহন করে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ কী? তা কাটিয়ে উঠতে করণীয় কী হতে পারে?
উত্তর : বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে মূলত অবকাঠামোগত দুর্বলতা, শুল্ক প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং লজিস্টিক ব্যবস্থার ধীরগতির কারণে। এর ফলে আমাদের রপ্তানিকারকরা বৈশ্বিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন একটি সমন্বিত কৌশল।
শুধু বাণিজ্য চুক্তি করলেই হবে না; বরং প্রয়োজন শুল্ক কাঠামো সংস্কার, পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা এবং গবেষণানির্ভর ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন।
প্রশ্ন : দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কতটা আশাবাদী?
উত্তর : আমি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। দেশ এখন এমন এক পথে হাঁটছে, যেখানে রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পরকে শক্তিশালী করছে। এই ধারাটি অব্যাহত থাকলে সামনে আমাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে। আমরা যদি এখনই কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন এবং নীতিনির্ধারণে স্থিরতা নিশ্চিত করতে পারি, তবে আগামী কয়েক বছরেই বাংলাদেশ একটি আরো শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ