ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৭, আগস্ট ৭, ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে গালফ হেলথ কাউন্সিল অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের মালিকরা।

ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে বাংলাদেশিদের জন্য যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সেই গালফ হেলথ কাউন্সিলের অনুমোদিত বাংলাদেশের মেডিকেল সেন্টারগুলোতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রবাসে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এসব কর্মী ধরা পড়লে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গালফ হেলথ কাউন্সিল অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের মালিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গালফ হেলথ কাউন্সিল অ্যাপরুপড মেডিকেল সেন্টার ওনার্সের সমন্বয়কারী মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, ‘যে সমস্ত দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা যান তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপসাগরীয় দেশ সমূহের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ড আছে যা, গালফ হেলথ কাউন্সিল নামে পরিচিত। এর মধ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন উল্লেখযোগ্য। তাদের প্রধান কাজ হলো উপসাগরীয় দেশ সমূহ যে সমস্ত দেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করে সে সব দেশের যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য গালফ হেলথ কাউন্সিলের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা তাদের নির্দেশমালা অনুসারে সরাসরি এসে পরিদর্শন করে উপযুক্ত মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দিয়ে থাকেন। তাদের একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে যা Rules & Regulations for Medical Examination of Expatriates bound for GCC States নামে পরিচিত। ’

লিখিত বক্তব্যে মেজবাহ উদ্দিন আরও বলেন, ‘গালফ হেলথ কাউন্সিল পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ছাড়াও ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন শহরে যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশাল, শেরপুর ও চাঁদপুর নতুন নতুন মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন দিয়েছে। যার সংখ্যা ২৬ থেকে এখন প্রায় ২৬০টি। ’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মেডিকেল সেন্টারগুলোকে পুঁজি করে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী, লোভী, অসৎ ও প্রতারকরা ভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসাবে কিন্তু অবৈধ পন্থা খুঁজে বের করে। এ চক্রটি এতটাই বেপরোয়া হয়ে যায় যে, কোনো কিছুই তাদের কাছে অনৈতিক বা অন্যায় মনে হয় না। এত ব্যাপকভাবে তারা অনিয়ম করতে থাকে যে সমাজের সমস্ত মানুষের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। তারা গালফ হেলথ সেন্টারের সফটওয়্যারকে ম্যানুপুলেশন করে নিজের পছন্দের সেন্টারে স্লিপ তুলে অন্যদের বঞ্চিত করছে। ’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ঢাকার ভেতরে অনঅনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে প্রতারণার মাধ্যমে নির্ধারিত ফি এর ৩-৪ গুন অর্থ সংগ্রহ করছে এবং ঢাকার বাইরের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট ইস্যু করছে যা গালফ হেলথ কাউন্সিল নীতিমালা ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেরও পরিপন্থি। এদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু মাত্র অর্থের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেও স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট প্রদান করছে বলে খবরে জানা যায়। ’

কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া প্রবাসে গিয়ে যখন পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তখন অনেকে স্বাস্থ্যগতভাবে অযোগ্য হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এ ধরনের অসৎ কাজের জন্য বিদেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসা প্রদান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ’

এ বিষয়ে পরে মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, ‘আমরা খবর পাচ্ছি, কিছু কিছু মেডিকেল সেন্টার ম্যানুপুলেশন করে ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রবাসে মানুষ পাঠাচ্ছে, এ বিষয়টি আমরা আজকে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিক এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘এ সব মেডিকেল সেন্টারে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে সব প্রবাসীরা চাকরি করতে যান তাদের রিক্রুটমেন্টের জন্য যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার জন্যই। সেখানে গালফ হেলথ কাউন্সিলের নীতিমালা অনুসারে ব্যস্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ও অযোগ্য নির্ধারণ করা হয়। এ সব মেডিকেল সেন্টার  থেকে মেডিকেলের রিপোর্ট যে ব্যক্তি যেই দেশে যেতে ইচ্ছুক সে দেশের হাইকমিশন অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু এখন সেখানে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে যারা প্রবাসে যাচ্ছে পরে ওসব দেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ত্রুটি ধরা পড়ছে বলেও জানান তিনি।

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।