ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও জেসিএক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী (জুয়েল) বলেন, কয়েক বছর ধরেই দেশের আবাসন খাত ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারি থেকে এ পতনের শুরু।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দায় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে রড, সিমেন্ট, টাইলস, রংসহ সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে। দেশের আবাসন বাজার মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর নির্ভরশীল। তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বিক্রির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে।
তিনি বলেন, শুধু আবাসন নয়, সার্বিকভাবে ব্যবসায় খাতেই স্থবিরতা বিরাজ করছে। অনেক ব্যবসায়ী কার্যক্রম সংকুচিত করতে বা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের দুরবস্থার কারণে আবাসন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। ঋণ প্রদানের হার কমে গেছে, আর সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে, ঋণ বিতরণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আবাসন খাতে ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যক্তিগত ও করপোরেট পর্যায়ে ট্যাক্সের বোঝা কমানো হয়নি বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থ শর্তহীনভাবে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় এ খাতের সংকট গভীর হয়েছে। কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্থবিরতার কারণে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। সরকারের নীতিমালার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিদেশি বিনিয়োগ এলে গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য রক্ষা সহজ হতো। এজন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
লুক্সেমবার্গ বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মডেল বিবেচনা করা যেতে পারে।
নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর গঠনে আবাসন খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু উচ্চ ব্যয় ও অনিয়মের কারণে সঠিক বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না, ফলে নিরাপত্তা ও বসবাসযোগ্যতা হুমকির মুখে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং সৎ ও মানসম্মত ডেভেলপারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে ধীরগতি আবাসন খাতের আরেক বড় অন্তরায়। প্ল্যান অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা নির্মাণ ব্যয় বাড়ায়। দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়ন করে খাতে গতি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। শ্রমিক সংকট মোকাবিলা, ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, নতুন নকশা উদ্ভাবন ও তথ্য বিশ্লেষণে এআই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নগদ অর্থের সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আবাসন খাত পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। তাই সরকারের এখনই বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। কারণ দেশের জিডিপিতে এ খাত বড় অবদান রাখতে পারে।