খুলনা: ব্যস্ততম খুলনার শিববাড়ির মোড়। ফুটপাতের ধারে সারিবদ্ধ হয়ে একদল মানুষ দুপুরের খাবার খাচ্ছে।
থালাভরা খাবার নিজেরা নিতে পেরে অনেকের মুখে খুশির ছাপ ভেসে উঠেছে। খাবার হাতে পেয়েই খেতে শুরু করেছেন। মনে হয় বহুদিন পর যেন একটু ভালো খাবারের স্বাদ পেয়েছেন। এই ক্ষুধা অভাবের আর অনাদরের ক্ষুধা। মুখে শুধুই আয়োজকদের জন্য দোয়া এসব মানুষের।
অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে এমন বুফে খাবারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুড ব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থা। প্রতি রোববার এ স্থানে এ রকম খাবারের আয়োজন করেন তারা। যেখানে দরিদ্র মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য। এখানে যারা আসেন তাদের বেশিরভাগের পরিধেয় কাপড় মলিন, কারওটা ছেঁড়া। অনেকের পায়ে নেই জুতা। ডিম, সবজি, মাছ, মাংস ও ডাল সাথে ভাত থাকে এ আয়োজনে। একেক সপ্তাহে একেক ধরনের মেনু থাকে খাবারের।
খাবার খেতে খেতে তৃপ্তি নিয়ে আব্দুল্লাহ নামের এক রিকশা চালক বলেন, নিজে নিজে নিয়ে প্যাট ভরে খাইছি। রান্নায় ভালো স্বাদ হয়ছে। প্রতি রোববার এখানে আসি।
নেছাউন নামের এক নারী বলেন, আল্লাহ হেগো বাঁচায় রাখুক। তারা আমাদের যেন এমন খাওয়াতে পারে। রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে।
খাবার পরিবেশনকারীরা বলেন, আমরা যদি আমাদের আশেপাশের অসহায় মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারি, সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম রোজা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা স্টুডেন্ট আমারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে না পারলেও পরিবেশন করে সহযোগিতা করি। আমরা এভাবে গরীবদের সহযোগিতা করি। তারা যখন খাবার নিয়ে হাসিটা দেন, সেটা দেখে মন ভরে যায়।
ফুডব্যাংকিং খুলনা কল্যাণ সংস্থার সভাপতি শাহরিয়ার কবির মেঘ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের বড় বড় শহর ঢাকা-চট্টগ্রামে অসহায় মানুষের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের আয়োজন করা হয়। তারা যদি করতে পারে তাহলে আমাদের খুলনা কেন পিছিয়ে থাকবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকে ২০১৭ সালে তৃপ্তির ‘আহার’ নামে একটি কার্যক্রম শুরু করি যা আজকে গরিবের বুফেতে পরিণত হয়েছে। প্রতি রোববার দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অসহায় গরীব মানুষের জন্য এ আয়োজন করা হয়। আমাদের ইচ্ছা সপ্তাহের ৭ দিন আসহায় সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের জন্য বুফের আয়োজন করা। আজ ১৭০ জনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
এমআরএম