ঢাকা: আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে সে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। এ কথা বলেছেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে ফরমাল কোনো নির্দেশনা পাইনি। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা প্রস্তুতি অবশ্যই রয়েছে। আমাদের নির্বাচন কমিশন থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে আমরা সে দায়িত্ব পালন করব।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অনেক সেনা কর্মকর্তা প্রচারণা চালাচ্ছেন, এ বিষয়টি সেনাবাহিনী কিভাবে দেখছে—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। আপনারা বুঝতে পেরেছেন কে কী উদ্দেশ্যে এসব প্রোপাগান্ডা ও মিস-ইনফরমেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে। আপনারা ভালো বোঝেন, আপনাদের দায়িত্ব দিলাম কে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রায় ৮০ শতাংশ হারানো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। অস্ত্র উদ্ধার হলে সেটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সহযোগিতা করবে।
তিনি মবের বিষয়ে বলেন, মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এটা বলেছি আমরা। যেখানে যখন মব হয়েছে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে পোঁছে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কয়েকটি জায়গায় আমাদের যে বিলম্ব হয়েছে সেটা সোর্স থেকে তথ্য পেতে বিলম্ব হয়েছে। যে কোনো ঘটনা ঘটার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়। তারপর আমাদের অনুরোধ জানালে, এর মধ্যে কিন্তু কিছু কালক্ষেপণ হয়ে গেছে, তারপর আমাদের নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে যদি পেট্রোল পাঠায় তখনো কিছু সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আসলে যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায় এটার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। এমন একটি উদাহরণ দেখানো যাবে না যে আমাদের অনুরোধ করেছে আমরা যাইনি বা সেনাবাহিনীর সামনে মব হয়েছে সেনাবাহিনী যায়নি, এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, আমরা চেষ্টা করছি সামনের দিনগুলোতে এই ধরনের ঘটনা ইনশাআল্লাহ আরও কমে আসবে।
গুম কমিশন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান কী এবং গুম কমিশনকে সেনাবাহিনী কিভাবে সহযোগিতা করছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুম কমিশন নিয়ে যে গুজব সেটা আসলে গুজবই। কেননা গুম কমিশনের তদন্তের জন্য আমাদের যাদের ডাকা হয়েছে সবাই গুম কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করে যাবেন।
সীমান্তে আরকান আর্মির উৎপাত ও চোরাচালানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে যে সংস্থাগুলো নিয়ে কাজ করে তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। তারা এ বিষয়ে সজাগ ও সোচ্চার আছে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতির অবনতি হলে সবাই সম্মিলিতভাবে ট্যাকেল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝটিকা মিছিলগুলো বা কোনো দলের জন্য এই মিছিলগুলো করার জন্য যে নিষেধাজ্ঞা থাকে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
মব করে মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার সুযোগ নেই
মুক্তিযোদ্ধার বাসায় মব সৃষ্টি করে হামলার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আগেও যেভাবে সশ্রদ্ধ সম্মান করেছি, আজও করি এবং ভবিষ্যতেও অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবো। কোনো মব করে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার কোনো সুযোগ নেই।
‘মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে একটি মব সৃষ্টি হয়েছিল, যখন সেনাবাহিনী মেসেজ পেয়েছে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট উপস্থিত হয়ে মব নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ্। ’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে নৃশংসভাবে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর বাসায় হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ধৈর্যের ও পরিশ্রমের সঙ্গে সরকার ও দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সেনাবাহিনীর একমাত্র কাজ নয়। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার/আটক এবং হস্তান্তর করা যায়। কোনো জুডিশিয়ারি কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী কাউকে সাজা দিতে পারে না। সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বিতভাবে একত্রে কাজ করতে হবে। অলরেডি সবাই কাজ করা শুরু করেছে।
রাজবাড়ীতে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও দরবারে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনা অনেক পরে সেনাবাহিনী জানতে পারে। যখনই জানতে পেরেছে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর রাত ১১টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তৎপর।
এজেডএস/এইচএ