গাজীপুর: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৭তম জন্মদিন ১৩ নভেম্বর (শুক্রবার)। এ উপলক্ষে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের একটি ম্যুরাল উন্মোচন করা হবে।
শুক্রবার সকাল ৮টায় ম্যুরালটি উন্মোচন করবেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি উদযাপন করবেন হুমায়ূন পরিবারের সদস্য, তার ভক্ত ও নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত ১২টা ০১ মিনিটে নুহাশ পল্লীতে কেক কাটবেন তার ভক্তরা। এর আগে নুহাশ পল্লীর সব স্থাপনায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে।
তিনি বলেন, লেখক হুমায়ূন আহমদ জীবিত থাকাকালে যেভাবে দিনটি উদযাপন করতেন, সেই আঙ্গিকেই সব অনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে। ঢাকার ধানমণ্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাসাতেও দিনটি উদযাপন করা হবে।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমদ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পিরোজপুরে এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি শহীদ হন। তার মা আয়েশা ফয়েজ গৃহিণী ছিলেন। তবে অল্পস্বল্প লেখালেখিও করতেন।
হুমায়ূনের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের স্বনামধন্য শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক এবং ছোট ভাই আহসান হাবীব একজন রম্য সাহিত্যিক, কার্টুনিস্ট ও ব্যঙ্গ পত্রিকা উন্মাদ’র সম্পাদক।
হুমায়ূন আহমেদের ছোটবেলায় নাম রাখা হয়েছিল ছিলো শামসুর রহমান। ডাকনাম ছিল কাজল। তার বাবা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রেখেছিলেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন।
হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তার বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রামে থাকাকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু। তার ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৬২ সালে বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে পড়াশোনা করেন।
সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতা চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে লেখালেখি, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি মনোনিবেশ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ কাহিনীর পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সংলাপের পুরষ্কার, ১৯৭৩ লেখক শিবির পুরস্কার, ১৯৮৭ মাইকেল মধুসূদন পদক, ১৯৮৮ সালে বাচশাস পুরস্কার, ১৯৯০ সালে হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার ও জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।
পরবর্তীতে তিনি ক্লোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জুলাই ২০১২ সালে স্থানীয় সময় ১১টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার মরদেহ দেশে এনে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
টিআই