ফেনী: ফেনী জেলা জুড়ে বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া। জেলার পাঁচটি পৌরসভায় মেয়র-কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করতে ইতোমধ্যেই নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন প্রার্থীরা।
অনানুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু করেছেন অনেকে। বিগত সময়ে লাগাতার আন্দোলনে নাশকতার মামলায় বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোট নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে থাকায় পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ক্ষমতাসীন দলের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে তারা। এছাড়াও জোট নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেন সাপে বর হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের।
যে কারণে আগামী ডিসেম্বর মাসে ২৪৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে- নির্বাচন কমিশন থেকে এমন ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা কোমড় বেঁধে মাঠে নামলেও, এখনো নীরব বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীরা।
তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও, এ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা এবং উন্নয়ন করার মানসিকতাই ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হবে জানালেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জেলার পাঁচটি পৌরসভা ঘুরে একই কথা শোনা গেছে ভোটারদের মুখে মুখে।
ফেনী পৌরসভা
স্থানীয়রা জানান, মোট ১৮টি ওয়ার্ড সম্বলিত ২৭.২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৮ সাল থেকে যারাই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এবার যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, বিগত বছরের মতো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে যিনি কাজ করবেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন।
গত মেয়াদে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। পরে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ায় উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে শূন্য পদে আসেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন।
দল পরিবর্তনের শর্তে এবারও আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিতে পারে বলে এমন গুঞ্জন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
দলীয় সমর্থন পেতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান, একরাম হত্যা মামলায় কারাবন্দি যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল, প্রচার সম্পাদক আবু সুফিয়ান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নুল কবীর শামীমও মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের অবস্থা নাজুক হলেও গত মেয়াদের মেয়র প্রাথী পৗর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলালের নাম রয়েছে আলোচনায়।
পাশাপাশি সচেতন নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক ফেনী’র বার্তা সম্পাদক মীর হোসেন মীরু।
ছাগলনাইয়া পৌরসভা
২০০২ সালে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ২৮.৫০ বর্গ কিলোমিটারের এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা ১৩ বছর যাবৎ জন সমর্থন নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর।
এবারও দলীয় সমর্থনে তিনিই মেয়র পদে প্রার্থিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিনও প্রস্তুত হচ্ছেন।
তাদের বিপক্ষে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর আদুল হান্নান এবং গতবারের প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর ফারুক।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে, এমনটিই মনে করছেন ভোটাররা।
সোনাগাজী পৌরসভা
জেলার দক্ষিণ উপকূল পরিবেষ্ঠিত এ পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে সরকার দলীয় মেয়র পদ প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র নুর নবী লিটন।
আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন সেন্টু, পৌর বিএনপির সভাপতি দুলাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মনজুর হোসেন বাবর।
গত মেয়াদে এই পৌরসভায় জামায়াত প্রার্থী নির্বাচন করলেও এবার তারা কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
দাগনভূঞা পৌরসভা
নোয়খালী জেলার সীমান্তবর্তী দাগনভূঞাঁ উপজেলার ২৪.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের এ পৌরসভাতে রয়েছে মোট ৯টি ওয়ার্ড।
বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক খান এবছর ফের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন এমনটিই আশা করছে তার সমর্থকরা। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন গতবারের প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হুদা হুদন, আবুল কায়েস রিপন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়েজ আহমদ ও যুবলীগ নেতা মো. আলমগীর।
বরাবরের মত বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন।
পরশুরাম পৌরসভা
ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ২৪.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়োতনের পরশুরাম পৌরসভাটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের চাচাতো ভাই বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেলই আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী।
তার বিপক্ষে বিএনপি থেকে সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের নাম শোনা যাচ্ছে।
শুধু মেয়র পদ প্রার্থীরাই নন, সরব হয়ে উঠেছেন কাউন্সিলর পদ প্রত্যাশীরাও।
সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে জেলা পর্যায়ের বৈঠক শেষে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
একই কথা জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত জানার পরে জেলা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কাকে, কোথায় প্রার্থী করা হবে বা আদৌ করা হবে কিনা। সময়ই সব বলে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
এটি
** কুমিল্লার ৬ পৌরসভায় আগাম নির্বাচনী উত্তাপ