বরিশাল সিটি করপোরেশনের এক অংশ এখনও অন্ধকারে। সিটি গঠনের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি জনপদ পশ্চাৎপদই রয়ে গেছে।
বরিশাল থেকে ফিরে: কীর্তনখোলা নদীর তীরে প্রাচীন জনপদ বরিশাল। কালের পরিক্রমায় দিন দিন এ জনপদটি শহর থেকে নগরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল একটি সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সুবিধা বেড়েছে কেবল মূল নগরেই। এখনও নগরের একটি অংশের মানুষকে সাঁকো দিয়েই খাল পার হতে হয়।
সমুদ্রের খুব কাছাকাছি অবস্থান, তাই নদী বিধৌত এলাকা বলেই বরিশাল সিটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য খাল। সেগুলোর কোনোটি আকারে একেবারে ছোট নয়। কোনোটি আবার গভীরও। আর এসব খাল পার হয়ে জনসাধারণের বাড়ি যাওয়া-আসার মাধ্যম কেবল বাঁশ বা কাঠের সাঁকো।
অন্তত এক দশক আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাঁকো উঠে গেছে। প্রায় সব অঞ্চলের সাঁকোই এখন কংক্রিটের ব্রিজে রূপান্তরিত হয়েছে। কোথাও আবার সেগুলো কালভার্টে রূপ পেয়েছে। যার বেশিরভাগই গ্রাম অঞ্চলে। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ বা কাঠের ঝঁকিপূর্ণ সাঁকোর বদলে মানুষ এখন গ্রামের বাড়িতেও গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন।
বরিশাল সিটিই দেশের একমাত্র সিটি করপোরেশন, যে সিটির মানুষ এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। ২০০২ সালের ২৫ জুলাই গঠিত এ সিটির পশ্চিমাংশের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে সাঁকো পার হতে হয়।
বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র দেখলে বোঝার উপায় নেই, এ শহরেরই সীমানা ঘেঁষা এলাকাগুলোর এ দুরাবস্থা।
সিটির ২৩ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাগুলোর ভেতর মূল রাস্তা পাকা হলেও তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের উপর কোনো আধুনিক সেতু বা কালভার্ট করা হয়নি। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনেই রয়েছে বাঁশ অথবা কাঠের সাঁকো। এলাকাবাসীকে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত পার হতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের। অনেক সময় শিশুরা খালে পড়ে যায়। এতে প্রাণনাশেরও ভয় থাকে। প্রয়োজনীয় ভারী জিনিসপত্র নিয়ে পারপারেও ব্যাপক অসুবিধা হয়।
টিয়াখালী (২৬ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দীন বলেন, সব উন্নয়ন মূল শহরে। আমাদের জন্য কিছুই করা হয়নি। এখানে উন্নয়ন বলতে গ্রামের ভেতর পাকা রাস্তাটাই।
এদিকে, কোথাও খালের উপরে ব্রিটিশ আমলে তৈরি লোহার ছোট ছোট ব্রিজ রয়েছে। এগুলোর পুরো কাঠামো লোহার। কেবল ইট সিমেন্টে তৈরি স্ল্যাব দিয়ে পাটাতন করা হয়েছে। সেগুলোও ব্যবহার উপযোগীতা হারিয়েছে অনেক আগে। বর্তমানে তা কেবল নির্ঘাত মূত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের রেলিং ভেঙে গেছে। পাটাতনের বেশির ভাগই ক্ষয়ে ক্ষয়ে পানিতে পড়ে গেছে। রডও বেরিয়ে চলে এসেছে বাইরে। নতুন ব্রিজ বা সংস্কার করা তো দূরের কথা, তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করারও যেনো লোক নেই। অথচ বরিশাল সিটি করপোরশেনের পদ রয়েছে ৫শ ৪২টি।
সাগরদী (২৩ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো আর অব্যবহারযোগ্য সেতু পার হয়েই প্রতিনিয়ত চলতে হয়। মেয়রকে এসব বললেই তিনি কেবল চেষ্টা করছেন বলে জানান। কিন্তু তার চেষ্টা যে কবে সফল হবে কে জানে!
এ বিষয়ে জানতে মেয়র মো. আহসান হাবীব কামালের ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তা খোলা পাওয়া যায়নি। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার দাসকে পাওয়া যায়।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃত বিষয় হলো, সিটি করপোরেশনের এতো সম্পদ নেই। যা আয় হয় আর তহবিলে আসে তা নগরীর উন্নয়নের জন্যই ব্যয় হয়। তবে আমরা অন্তত একটি কাজ করতে পেরেছি, রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে। সাঁকোর বদলে সেতু বা কালভার্টও ধীরে ধীরে করা হবে।
তাই বলে ১৩ বছর সময় নেওয়ার পর আর কতো সময়ের প্রয়োজন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেই কাজ করতে হয়, তাই উন্নয়ন সব অংশে করা যাচ্ছে না।
২০০২ সালের সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচত মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান সারওয়ার। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শওকত হোসেন হিরণ (প্রয়াত) নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বর্তমানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি নেতা মো. আহসান হাবীব কামাল।
বরিশাল সিটির লোকসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এরমধ্যে অবহেলিত পশ্চিমাংশে প্রায় এক লাখ লোক বসবাস করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
ইইউডি/এসএস
জাতীয়
বসিক- পর্ব ১
৮টি ওয়ার্ডে বাঁশের সাঁকোই ভরসা!
ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।