ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে: রিভিউ আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পড়ে শোনানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা দেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার পর তাদের এ রায় পড়ে শোনান কারা কর্মকর্তারা।
রাত আটটা ৪৫ মিনিটে রায় দু’টির কপি পৌঁছে কারাফটকে। রায়ের কপি গ্রহণ করেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে তা পাঠানো হয় ভেতরে। রাত সোয়া ৯টা থেকে কারা কর্মকর্তারা রায় দু’টি আলাদা আলাদাভাবে পড়ে শোনান কনডেম সেলে থাকা মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীকে।
সূত্রটি জানায়, রায় পড়ে শোনানোর পর দু’জনের কাছেই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে উভয় দণ্ডপ্রাপ্তই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তাদের জানানো হয়, এ পর্যায়ে কেউই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। তখন দু’জনই নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চান।
এর আগে, রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে রায় দু’টির কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হন ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ আইন গবেষণা কর্মকর্তা কাইয়ুম ফয়সাল, ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলাম, লাইব্রেরিয়ান তাপস চন্দ ও অফিস সহকারী আবু মুসা।
সন্ধ্যা সাতটা ২৪ মিনিটে রায় দু’টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে যায় বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালে। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তিনজন পৌঁছে দেন।
তারও আগে, রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সাকা চৌধুরী ও ছয়টা ৩৫ মিনিটে মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের রায় প্রকাশিত হয়। সাকার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় ১৩ পৃষ্ঠার ও মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় ২৯ পৃষ্ঠার।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে রায়ে স্বাক্ষর দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ চার বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ এবং অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
ফাঁসির দড়ি থেকে রেহাই পেতে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে তাদের সামনে রয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। রায় শোনানোর পর মুজাহিদ-সাকা চৌধুরী ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে কিছু স্পষ্ট না করায় বিষয়টি অনিষ্পন্ন রয়ে গেল।
ক্ষমা প্রার্থনার এ বিষয়টি নিষ্পত্তির পর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
গত ১ অক্টোবর মুজাহিদ-সাকার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই কারাগারে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ও ফাঁসির চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয় তাদেরকে। আগেরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ওই দু’জনের আপিল খারিজ করে ফাঁসি বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে এ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।
গত ১৪ অক্টোবর রিভিউ আবেদন করার পর থেকে মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত ছিল। বুধবার রিভিউ খারিজ হওয়ায় ফের সচল হয়েছে এ পরোয়ানা। এখন মুজাহিদ ও সাকাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ারাধীন।
তবে, এবার কারা কর্তৃপক্ষ আসামিদের লিখিত আদেশ জানিয়ে মৃত্যু পরোয়ানা কার্যকর করতে চায় বলে দুপুরে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, সংক্ষিপ্ত আদেশ বা পূর্ণাঙ্গ রায় কারাগারে গেলে আসামিরা তা জানার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবেন। এটা না করলে বা খারিজ হলে রায় কার্যকর করবে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫/আপডেট ২২০৮ ঘণ্টা
এসকেএস/এইচএ/
** রিভিউ রায় পড়ে শোনানো হচ্ছে মুজাহিদ-সাকাকে
** মুজাহিদ-সাকার রিভিউ রায় কারাগারে
** কারাগারের পথে মুজাহিদ-সাকার রিভিউ রায়
** মুজাহিদ-সাকার রিভিউ রায় ট্রাইব্যুনালে
** মুজাহিদের রিভিউ রায়ও প্রকাশ
** সাকার রিভিউ রায় প্রকাশ
** বিচারপতিদের স্বাক্ষর, প্রকাশের প্রস্তুতি
** মুজাহিদ-সাকার রিভিউ রায় প্রকাশের প্রস্তুতি
** রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেবেন মুজাহিদ
** শুক্রবার মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করতে চান আইনজীবীরা
** নিজেকে এখনও নির্দোষ দাবি করছেন মুজাহিদ
** সাক্ষাৎ শেষে বাড়ি ফিরেছে সাকার পরিবার
** দেখা করার আবেদন মুজাহিদের পরিবারের
** মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করলেন স্বজনরা