ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তানের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। ইতোমধ্যে সেখানকার চার হাজার হকার পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছে তারা।
ডিএসসিসি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, উচ্ছেদ হওয়া হকারদের জন্য ওসমানী উদ্যানের পূর্ব পাশ এবং মুক্তাঙ্গন অথবা নাট্যমঞ্চের সামনের খালি জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্রটি বলছে, বরাদ্দকৃত জায়গায় হকারদের মার্কেট করে দেওয়া হবে। এ মার্কেটে প্রত্যেকটি দোকানের সাইজ হবে ৪ বর্গফুট। মার্কেটের মাঝখানে আবার ৪ ফুটের মতো করিডোর থাকবে। এসব দোকানের জন্য সিটি করপোরেশনকে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব দিতে হবে হকারদের।
রোব ও সোমবার (১৫ ও ১৬ নভেম্বর) সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে হকার উচ্ছেদ করার পর মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার সিংহভাগ হকারদের দখলে থাকার স্বাভাবিক চিত্র আর নেই। সেখানকার ফুটপাতও প্রায় দখলমুক্ত।
এ উচ্ছেদ স্থায়ী কিনা? জানতে চাইলে ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএসসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো তাদের সরিয়ে দেই, যেন আর না বসে। কিন্তু সবসময়ই তো দেখি পরে এসে আবার বসে যায়। এ বিষয়ে তদারকি করা কঠিন। আমাদের এত জনবল নেই যে সেখানটায় পাহারা দেবো।
গুলিস্তান হকারমুক্ত রাখা সম্ভব কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের তিনি বলেন, অসম্ভব কিছুই নয়। স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতা পেলে মোটামুটি সম্ভব হবে।
গত ১২ নভেম্বর হকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। ওই বৈঠকে তিনি গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে হকারদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনেরও কথা বলেন।
এজন্য করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমদকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন মেয়র। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-উর-রশীদ, সহ-সভাপতি খোকন মজুমদার, জাহাঙ্গীর জোয়ার্দার, করপোরেশনের রাজস্ব শাখার উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার, সংশ্লিষ্ট অঞ্চল (১, ২ ও ৪) এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল ১, ২ ও ৪), মেয়রের একান্ত সচিব কবীর মাহমুদ, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, র্যাব ও পুলিশের একজন করে প্রতিনিধি।
এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর হকারদের উচ্ছেদ করা হয়।
ডিএসসিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্ছেদের পর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির তৈরি করা রেজুলেশন মেয়রের অনুমোদনের অপেক্ষায়। মেয়র অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট কমিটি বৈঠকে বসবে। সে বৈঠকে সদস্যদের বক্তব্য-পরামর্শের আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে, সে আলোকেই হকার পুনর্বাসন হবে।
এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক খালিদ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, হকারদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন নিয়ে আমরা (কমিটি) বৈঠকে বসেবো। কীভাবে হকারদের পুনর্বাসন করা যায়, এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। সে আলোকে প্রতিবেদন মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত-ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
একই কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বাংলানিউজকে জানান, প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি হকারদের পুনর্বাসন করার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে আলোকে কাগজও হয়েছে। চার হাজার হকারের দোকান বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ওসমানী উদ্যানের পূর্ব পাশ এবং মুক্তাঙ্গনের জায়গার একটা ড্রয়িংও হয়েছে। যেখানে প্রত্যেকটা দোকান ৪ বর্গফুট হবে, মাঝখানে ৪ ফুটের রাস্তা হবে।
এম এ কাশেম বলেন, মেয়র হানিফ তার সময়ে এটা করে যেতে পারেননি। এখন তারই ছেলে সাঈদ খোকন মেয়র, তিনি হকারদের পুনর্বাসনের কথা বলেছেন। এখন সম্ভাব্য পুনর্বাসনের জায়গা হিসেবে ওসমানী উদ্যানের পূর্ব পাশ এবং মুক্তাঙ্গনের সঙ্গে গুলিস্তান নাট্যমঞ্চের খালি জায়গাটি ধরা হচ্ছে।
হকারদের সংখ্যা নিয়ে তিনি বলেন, মেয়র বলেছেন, ৩২০০ বা ৩৫০০। আমাদের হিসেব অনুযায়ী চার হাজার।
এদিকে, পুনর্বাসনের এ খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হকাররা। তারা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা বেশি সুযোগ পায়। বাদ পড়ে যায় প্রকৃত হকাররা। সেজন্য এ পুনর্বাসনে যেন প্রকৃত হকারদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়, এমন অনুরোধ তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এসইউজে/এইচএ/