ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার যে দাবি নতুন করে করা হচ্ছে তা নেহায়েত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাষ্ট্রপতি বরাবর দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর প্রাণভিক্ষার আবেদন তার কাছে যাওয়ার পর শনিবার (২১ নভেম্বর) রাতে গুলশানের নিজ বাসভবনে এ মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে করা হয়েছে। তাই সেখানে কি লেখা হয়েছে তা সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতার কারণে আমি কিছু বলতে পারি না। আবার আমার মতামত আমি দিয়েছি রাষ্ট্রপতির কাছে। তাই সে বিষয়ে কিছু বলবো না।
তবে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে তার ক্ষমতা প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছেন আসামিরা। এ অনুচ্ছেদ যেহেতু প্রাণভিক্ষার আবেদন সংক্রান্ত, সেহেতু তাদের আবেদনটি অবশ্যই প্রাণভিক্ষা চেয়ে করা হয়েছে। তাই দু’জনের পরিবার বা দল থেকে যে বলা হচ্ছে, প্রাণভিক্ষা চাওয়া হয়নি, সেটি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
এর আগে জামায়াত এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন-এ খবর অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক। দলীয় ওয়েবসাইটে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে গিয়ে তার বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাকা চৌধুরীর ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী। তিনি ও তার পরিবার বিশ্বাসও করেন না যে, সাকা চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন ফাইয়াজ।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার যে দাবি নতুন করে করা হচ্ছে তা নেহায়েত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য।
শনিবার দুপুরে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিজেদের একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করে লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এর বিচার নিয়ে হুঙ্কার ছাড়া দু’জন অপরাধীর এ স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
পরে আবেদন দু’টি পর্যায়ক্রমে কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে আইনমন্ত্রীর বাসায় যায় তার মতামত দেওয়ার জন্য। আইনমন্ত্রীর মতামত সম্বলিত আবেদন দ্রুতই পাঠানো হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় কারাগারে শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছে ফাঁসির মঞ্চ। আবুল, হজরত, মাসুদ, ইকবাল, রাজু, শাহজাহান ও মুক্তার নামের সাতজন জল্লাদকেও দুইদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ যারা ফাঁসির আগে-পরে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরেই কারাগারে চলে গেছে ফাঁসি কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশ। ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাও (মেডিকেল চেকআপ) সম্পন্ন হয় দু’জনের।
সর্বশেষ শনিবার রাতে ফাঁসির মঞ্চে আলো জ্বালানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স। ডাক পেলেই নিয়ে কারাগারে আসা হবে অ্যাম্বুলেন্স দু’টি।
কারাগার এলাকায় তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগে থেকেই কারা এলাকায় নিরাপত্তা ছিল জোরদার, তবে বিকেল থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের যান চলাচল ও কারাগার সংলগ্ন দোকান-পাট।
মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার খবর অসত্য দাবি জামায়াতের
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এসএমএ/ এসএস/ আইএ/এএসআর