ঢাকা: রাষ্ট্রপতির কাছে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাওয়া ও পাওয়ার সুযোগ রোধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এ সংশোধনী চায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
‘যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কলাণে ব্যয় করতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করার বিষয়ে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ এখন আমাদের উদ্বেগের কারণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, চলবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদল হলে এ অনুচ্ছেদের কারণে অনেকে ক্ষমার সুযোগ নেবেন।
কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধীরা যাতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পান সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান আমিরুল ইসলাম।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তার আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিদ্যমান আইসিটি আইনের ২০ ধারায় নতুন সংশোধনীর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। সরকার যদি পরিবর্তন হয় রাষ্ট্রপতি ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করতে পারেন। এটা সংশোধন হওয়া দরকার।
আমিরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি যোগ্য বলে গণ্য হবে না- আইসিটি আইনের ২০ ধারায় নতুন আইন যুক্ত হবে। মন্ত্রীর আশা-মার্চের মধ্যে এ সংশোধনী আসতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অবস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবিও জানানো হয়।
নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির লিখিত বক্তব্যে বলেন, আইসিটিতে দণ্ডিত মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, সব দল ও বাহিনীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ‘ভিকটিমস কম্পেনসেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন ও আইনের সংশোধন করতে হবে।
এ দাবির আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ ও ১০২ অনুচ্ছেদ তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের পক্ষে শতভাগ অনুকূলে রয়েছে।
ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল, রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভ, সাবেক ইয়োগোস্লাভ ও যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ টেনে এ বিচারপতি জানান, সরকার মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুকূলে রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করলে তা দিয়ে সন্ত্রাস ও লবিস্ট নিয়োগে ব্যবহার করবে। এখনই এ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই সরকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে সংবিধান অনুযায়ী তারা কোনো রিট করার সুযোগ পাবে না’- বলেন বিচারপতি মানিক।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, অনেক মানবাধিকার সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অধিকারের কথা বলছে। কিন্তু শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকারের কথা কেউ বলেন না।
তিনি বলেন, আমরা তাদের অধিকারের কথা বলছি। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হোক। যুদ্ধাপরাধীদের যারা সমর্থন করছে, যে দল সমর্থন দিচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, খুনিদের যারা বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করেছে- তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জুরিস্ট কানাডা শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাটর্নি উইলিয়াম স্লোন আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ টেনে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবির সমর্থন জানান।
শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা রিকশা চালান, মানুষের বাসায় কাজ করেন, ভিক্ষা করছেন। তা হতে পারে না। অবস্থা পাল্টেছে, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যবহার করা হোক।
ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
এফবি/এএসআর