ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেখতে চাই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় কিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
দেখতে চাই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় কিনা ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া না নেওয়া ‘দেখার বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এবার দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে।

এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আর বলতে পারবে না, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনমুখী দল।

বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের জরুরি সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি যোগ দেয়নি। তারা নির্বাচনকে বাতিল করতে অনেক কাজ করে গেছে। নির্বাচন শুধু বয়কট করেনি, বয়কট করার নামে মানুষ হত্যা করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করা থেকে শুরু করে নির্বাচন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা ৫০০ স্কুল-কলেজে হামলা করেছে। রীতিমতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। আল্লাহর রহমতে জনগণ আমাদের সঙ্গে ছিল বলে তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। নির্বাচনে ৪০-৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। উন্নত দেশে যে পরিমাণ ভোট পড়ে, তার চেয়ে বেশি পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক কিছু করেও তারা পারেনি সফল হতে। আসলে বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই হত্যার রাজনীতি করে আসছে। আবার তাদের মধ্যে একটা দ্বৈততা আছে- তারা স্থানীয় সব নির্বাচনে ঠিকই অংশ নিচ্ছে, কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে, কোনো উপ-নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তারা একমুখে বলে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করবে না। আবার অপরদিকে দেখা যায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবসময় অংশগ্রহণ করছে, দলীয় প্রার্থী দিচ্ছে বা সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে ঠিকই অংশগ্রহণ করছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। আর বাইরে বলে বেড়াচ্ছে নির্বাচনে অংশ নেয়নি, নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না।

এবার দলীয় ভিত্তিতে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এবার একটু দেখতে চাই নিজ দলের মার্কা নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় কিনা। এটি তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। নিজ নিজ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এখন তারা নির্বাচনটা করে কি করে না, সেটা দেখার বিষয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আর তারা বলতে পারবে না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। কারণ দলীয় প্রতীক নিয়ে তারা তো নির্বাচন করলো। আর না করলে এটা তাদের দলের জন্য ক্ষতি। এখন তারা কোন পথে যাবে, এটা তাদের বিষয়। এটা আমাদের বিষয় নয়।

তিনি বলেন, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত যদি দলীয়ভাবে নির্বাচন সব সময় হতে থাকতো, তবে সব রাজনৈতিক দল আরও শক্তিশালী হতো। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তো। অন্যদিকে প্রার্থীরাও ভোটারদের স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে বেশি মন দিতেন। রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। আমরা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।

আওয়ামী লীগ চায় সব দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক, এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই সব দল অংশ নিক। আওয়ামী লীগ সব সময় নিজে নির্বাচনমুখী দল। এই দল উপমহাদেশের প্রাচীন একটি সংগঠন। গণতন্ত্র মেনেই এই দল পরিচালিত হয়। দেশে সবরকম আন্দোলনের তালিকায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে-সংগ্রামের জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি রয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেই দলীয়ভাবে নির্বাচনের এই উদ্যোগ। এতে সবাই থাকবে, সব দলের জন্য এটি ভালো হবে। নিজ নিজ দলও শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগ নিজেও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ছিলেন অবৈধ। ঠিক যেভাবে আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই জিয়া ক্ষমতা দখল করেন। তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন বলেই তার সব কাজ অবৈধ। জিয়াকে এখন সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা হলে তা হবে আইনের হিসেবে অবৈধ, আদালত অবমাননার শামিল।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, পৃথিবীর সর্বত্রই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়। এ বিচারের রায় আদালতের রায়। এটা কার্যকর হবেই। এ বিচারকে নিয়ে, রায় কার্যকর নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একটি মহল মায়াকান্না করছে। যুদ্ধাপরাধীদের হাতে যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের কষ্ট কি তারা বোঝে? এমন মায়াকান্না করে দুই-একটা হরতাল দিয়ে এই বিচার বন্ধ করতে পারবেন না। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা জাতির কাছে আমাদের ওয়াদা ছিলো। মনে রাখতে হবে আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না।

জঙ্গিবাদী তৎপরতা সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করতে পারে না। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করতে পারে না। ইসলাম ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা ইসলাম ধর্মকে অসম্মান করা। সুইসাইড ইসলাম ধর্মে পাপ। একজন মুসলমান কী করে এই কাজ করেন। এটা ধর্ম রক্ষাও নয়, ধর্মের কাজও নয়। এটা করে সারাবিশ্বে মুসলমানদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে  দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।
 
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ায় মনোনিবেশ করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সাধ্যের সবকিছু করেন তিনি। পঁচাত্তরের পর পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় বসে স্বাধীন বাংলাদেশ ধ্বংসের সব চক্রান্ত করে। এই বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে না পারে সে অপচেষ্টা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে নিয়োগ দেন, সরকারি চাকরি দেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানান।

তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল পরাজিত শক্তি। এই সময়ে স্বাধীনতার চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই অবস্থা থেকে দেশকে টেনে তোলে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই। মানুষের প্রতিও কোনো দরদ নেই। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। এ কারণে তারা সহ্যও করে না যে, বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

এসময় দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের জন্য মানুষের জন্য রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ চায় বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নিরাপদ, অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এদেশের নিরাপত্তা অনেক বেশি। অথচ, এই বাংলাদেশকে অস্ত্র সরবরাহের পথ বানানো হয়েছিল। মন্ত্রী-এমপি খুন হয়েছিল।

বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানও কমেছে।

এসময় সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পত্র-পত্রিকায় আসা একসঙ্গে দু‘জনের প্রথমবারের ফাঁসির খবরের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে দু’জনের ফাঁসি এই প্রথমবার হয়নি। জিয়াউর রহমানের সময় ১৯টি ক্যু হয়। সেসময় কারাগারে কারাগারে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি হয়েছে।

** বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে না পারে সে অপচেষ্টা হয়েছিল

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫/ আপডেট ১৯১৬ ঘণ্টা/ আপডেট ২২০২ ঘণ্টা
এসকে/আইএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।