ঢাকা: সড়কের ওপর যেখানে-সেখানে রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি। এলোমেলোভাবে পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রীও।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, শান্তিনগর ও আশেপাশের এলাকা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এমন চিত্র ধারণ করে থাকে। এর জন্য মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকেই দায়ী করছেন নগরবাসী।
যাত্রী ও স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ, এমনিতেই রাজধানীর যানজটপ্রবণ এলাকা মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর ও রাজারবাগ। এর মধ্যে একসঙ্গে পুরো এলাকাজুড়ে ফ্লাইওভারের পিলার নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় যানজট আরো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা শত শত পরিবহন যানজটে আটকে থাকে। এ এলাকা দিয়ে স্কুল, কলেজ, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময়মতো পৌঁছানো মুশকিল হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এছাড়া প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে ভোগান্তিরও শেষ নেই নগরবাসীর।
ওইসব এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মৌচাক থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে রাজারবাগ ও দক্ষিণে শান্তিনগর পর্যন্ত পুরো সড়কজুড়ে এলোমেলোভাবে বড় বড় যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী রেখে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। পিলার নির্মাণের জন্য এসব এলাকার সড়কের ওপর তৈরি করা হয়েছে বড় বড় অসংখ্য গর্ত।
নির্মাণ যন্ত্রপাতি রাখা ও শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য সড়কের ওপর স্টিল দিয়ে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ঘর। পানির পাম্প ও জেনারেটর বসানো হয়েছে সড়কের মধ্যে। এতে গাড়ি চলাচলের পথ সরু হয়ে গেছে। যে কারণে এসব এলাকায় ব্যাপক যানজট লেগে থাকে।
সড়কের পাশে ফুটপাতে প্রায় শতাধিক হকার কাপড়-চোপড় ও ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি নিয়ে বসার কারণে সেখানেও মানুষের জটলা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার ফুটপাতে হকারদের উচ্ছেদ করে ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করা উচিত ছিল বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার এলাকায় দোকানিদের সমস্যার শেষ নেই। ধুলাবালির কারণে দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এসব এলাকায় ক্রেতার সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক দোকানি।
মালিবাগের মৌবন রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জহিরুল বলেন, এক মাস আগে এ এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর থেকে যানজট ও ধুলাবালি কয়েকগুণ বেড়েছে। যে কারণে যাত্রী, ব্যবসায়ীসহ সবাই অতিষ্ট। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দিনে একবার পানি ছিটিয়ে দিলেও ধুলাবালির প্রতিরোধে তাতে তেমন কাজে আসে না। ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে শেষ হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।
শান্তিনগর এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে বাসের যাত্রী আতাউল গনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়ন হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নির্মাণ কাজ চলার কারণে প্রতিদিন এ সড়কে যে যানজটের সৃষ্টি হয় তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। যানজটের কারণে যথাসময়ে অফিসে পৌঁছানো যায় না। তারা (নির্মাণ প্রতিষ্ঠান) রাতেও তো কাজ করতে পারতো।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র এক সহকারী প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে আগামী ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়েছিল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে আবারও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে তারা। এখন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ৭৭২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির কাজ শেষ হলে রাজধানীর যানজট অনেকটা কমবে। ফ্লাইওভারটি দু’টি রেলক্রসিংয়ের ওপর আড়াআড়ি নেওয়া হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। ফলে রেলক্রসিং পারাপারের ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা কমবে।
ফ্লাইওভার নির্মাণে সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসডিএফ) ৩৭৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ওপেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল (ওএফআইডি) ১৯৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও বাকি ২০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। ডব্লিউ-৪ প্যাকেজের আওতায় তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে এফডিসি মোড় হয়ে মগবাজার রেলক্রসিং পার হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছে নেমে যাবে ফ্লাইওভারটি।
ডব্লিউ-৬ প্যাকেজে বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ হয়ে রাজারবাগ পুলিশলাইন এলাকায় শেষ হবে। আর ডব্লিউ-৫ প্যাকেজের আওতায় চৌধুরীপাড়া থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর পার হবে।
ফ্লাইওভার প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে দু’টি প্যাকেজের (ডব্লিউ-৫ ও ডব্লিউ-৬) কাজ করছে চীনের মেটরোলজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি ও দেশি তমা কনস্ট্রাকশন। অন্য প্যাকেজের (ডব্লিউ-৪) কাজ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও দেশি নাভানা কনস্ট্রাকশন।
ডব্লিউ-৫ প্যাকেজ ছাড়া অন্যান্য প্যাকেজের অধিকাংশ পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে এখন গার্ডার নির্মাণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর