ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদক্ষেপ নেয় না বিএসটিআই

গ্যাস পরিমাণে কম দিচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
গ্যাস পরিমাণে কম দিচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকা-দ -১১-০৯৭১ নম্বর সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সেলিম রেজা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি ঢাকায় অটোরিকশা চালান।

তার দাবি, অধিকাংশ ফিলিং স্টেশন গ্যাস পরিমাণে কম দেয়। টাকা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে গ্যাস পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের(বিএসটিআই) অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক সময় বিএসটিআই অভিযোগ গ্রহণ করে না।

মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব সিএনজি স্টেশন এক না, অনেকে আছে- মিটার ফাঁকি দেয়। অনেক সুম(সময়) ১০০ টাকার গ্যাস কিনে একবার খ্যাপ(ভাড়া) মারলেই গ্যাস শ্যাষ হইয়া যায়। বিএসটিআইয়ে অভিযোগ করতে গেলে তারা ফিরিয়ে দেয়’।  

সেলিম রেজার মতো অনেকেই অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস কিনে থাকেন খুচরা গ্রাহকেরা। গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ফিলিং স্টেশনগুলো সঠিক পরিমাণে গ্যাস পেল কি-না এবং ফিলিং স্টেশন থেকে গ্রাহকেরা সঠিক পরিমাণে গ্যাস পেলেন কি-না তা পরিমাপের কোনো যন্ত্রপাতি নেই বিএসটিআই’র কাছে।

সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা মিরপুর ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস কম পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। এরপর বিএসটিআই’র কর্মকর্তাদের বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। বিএসটিআই’র ওই কর্মকর্তা ভুক্তভোগী শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে বলেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
 
বিএসটিআই’র তেল ও গ্যাস মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেট্রোলজি উইং সূত্র জানিয়েছে, তেল চুরি ধরার যন্ত্র আছে বিএসটিআই’র কাছে। তবে গ্যাস চুরি ধরার কোনো যন্ত্রপাতি নেই।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেট্রোলজি উইংয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ ফিলিং স্টেশন থেকে গ্রাহকেরা সঠিক গ্যাস পেলেন কি-না সেটি ধরার কোনো যন্ত্রপাতি আমাদের কাছে নেই। কোনো সিএনজিচালিত যাবাহন চালক যদি কোনো ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তবে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, গ্যাস চুরি ধরার আধুনিক কোনো অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। ঠিক একইভাবে কোনো গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে যদি কোনো ফিলিং স্টেশন অভিযোগ করে গ্যাস কম-বেশির বিরুদ্ধে তাতেও আমাদের কিছু করার নেই।
 
‘তেল চুরি ধরার আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাদের আছে। তবে গ্যাস চুরি ধরার কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাদের কাছে নেই। গ্যাস পরিমাপে যাতে কেউ না ঠকেন, সে বিষয়ে অবকাঠামো নির্মাণের বার বার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখেনি’-বলেন ওই কর্মকর্তা।
  
শুধু গ্রাহকই নয়, ফিলিং স্টেশনগুলো কি পরিমাণে সিএনজি কিনলো, কি পরিমাণে বিক্রি করলো সেটি ধরারও কোনো ক্ষমতা নেই বিএসটিআই’র। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল)গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ ধরতেও অক্ষম বিএসটিআই।

ঢাকা সিএনজি লিমিটেডের সাব-অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে থাকি। তিতাস গ্যাস কম দিলো না বেশি দিলো, তা নির্ণয় করার কোনো উপায় আমাদের ‍কাছে নেই।
 
তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, সিএনজি স্টেশনের ডিসপেন্সিং ইউনিটের পরিমাপ যাচাই, মিটার টেম্পারিং রোধ ও সঠিক পরিমাপের নিশ্চয়তা পাওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ নিয়ে গড়িমসি শুরু করেছে বিএসটিআই।
 
সিএনজি পরিমাপ নিয়ে গ্রাহকরা যেন না ঠকেন সে লক্ষ্যে সিএনজি মাস ফ্লো মিটার ক্যালিব্রেশন ও ভেরিফিকেশন ল্যাবরেটরি অবকাঠামো নির্মাণে বার বার ব্যর্থ হয়েছে বিএসটিআই। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে ট্যাংকলরি ক্যালিব্রেশন সেন্টার নির্মাণের কথা থাকলেও সেটিরও কোনো উদ্যোগ নেই।

বিএসটিআই থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গ্যাস চুরি ধরতে সাতটি সিএনজি মাস্টার মিটার কেনার কথা ছিল ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ। এ পযর্ন্ত তিনবার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কেনা হয়নি। ফলে চতুর্থবারের মতো দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতি কেনার মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পযর্ন্ত এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটেও বিএসটিআই’র অফিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার কথা থাকলেও এখনও কেনা হয়নি।

সূত্র জানায়, গ্রাহকদের ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ক্যালিব্রেশন, ভেরিফিকেশন ফ্যাসিলিটিজ অব সিএনজি মাস ফ্লো মিটার ফর সিএনজি ফিলিং স্টেশন ইন বিএসটিআই’ শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় এসব উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল।

প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে ঢাকার তেজগাঁও, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, রাজশাহীর শাহ মখদুম এবং সিলেটের খাদিমনগর।

মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। এর পরে প্রথম সংশোধনীতে ২০১৫ সালের জুন এবং দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর প্রথম সংশোধনীতে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

আবারও সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে বলে জানায় বিএসটিআই সূত্র। এতে করে কবে নাগাদ প্রকল্পের সুফল দেশবাসী পাবেন, তাও জানে না বিএসটিআই।

প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বাংলানিউজতে বলেন, গ্যাস চুরি ধরার জন্য সাতটি সিএনজি মাস্টার মিটার কেনার কথা ছিল ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ। এ পযর্ন্ত তিনবার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কেনা হয়নি। ফলে চতুর্থ বারের মতো দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবার মিটারগুলো কিনতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, তেল চুরি ধরার মিটার আমাদের কছে আছে। তবে গ্যাস চুরি ধরার কোনো মিটার আমাদের কাছে নেই। আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি মাস্টার মিটার কেনা হলে গ্যাস চোর ধরতে পারবো।
 
সাতটি সিএনজি মাস্টার মিটার না কেনা পর্যন্ত ফিলিং স্টেশনগুলো গ্রাহকদের ঠকালেও কিছু করার নেই বলেও জানায় বিএসটিআই।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।