ভোলা: ভোলার তুমুল আলোচিত লঞ্চডুবি ‘কোকো ট্র্যাজেডি’ দিবস শুক্রবার (২৭ নভেম্বর)।
২০০৯ সালের ভয়াবহ ওই লঞ্চ দুর্ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ৬ বছর।
ভোলার মানুষও ভুলতে পারেনি দুর্বিষহ সেই দুর্ঘটনার দিনটির কথা। এখনো মনে হলে আঁতকে ওঠেন তারা। এখনো ধূসর স্মৃতি তাদের চোখের পাতা আদ্র করে তোলে।
২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ১১টায় ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি কোকো-৪ লঞ্চ নাজিপুর ঘাটের কাছাকাছি এসে ২ হাজারেরও বেশি ঈদে ঘরমুখো যাত্রী নিয়ে তেতুলিয়া নদীতে ডুবে যায়।
এতে ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ৮১ জন প্রাণ হারায়। মৃতদেহ উদ্ধারে উদ্ধার কর্মীরা ৭ দিন ধরে অভিযান চালান। মৃতদের অধিকাংশ ছিলেন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে লালমোহন উপজেলার ৪৫ জন, চরফ্যাশনের ৩১ জন, তজুমদ্দিনের ২ জন ও দৌলতখানের ৩ জন ছিলেন।
সেই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিছু যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এরপর উদ্ধার হতে থাকে একের পর এক মৃতদেহ। নাজিপুর ঘাট এলাকা পরিণত হয় কান্নার জনপদে।
লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চর চকিনা গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। কোকো লঞ্চে করে ঢাকা থেকে ঈদের আগের দিন ২ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা হন। দুর্ঘটনার পর সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন তিনি। পরে উদ্ধার করা হয় স্ত্রী ও ছোট সন্তান। কিন্তু অপর সন্তানকে হারাতে হয় তাদের।
লোকমানের স্ত্রী সামসুন নাহার জানান, সরকারি সাহায্য পেলেও হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে তো পাননি। তার কথা মনে হলেই তাদের তার কান্না বাঁধ মানে না।
মাত্র ৪ মাস আগে বিয়ে করেছেন নুরে আলম সাগর। প্রথমবারের মতো স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে ওই লঞ্চে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। লঞ্চডুবিতে সলিল সমাধি হয় তাদের।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম শত চেষ্টা করেও ওই লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত উদ্ধার কাজ পরিত্ত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। আড়াই বছর পর তেতুলিয়া নদী থেকে ডুবে যাওয়া ওই লঞ্চটি উদ্ধার করে মালিকপক্ষ।
এদিকে, কোকো ট্র্যাজেডির ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এ রুটে চালু হয়নি নিরাপদ লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই এখনো প্রতিদিন চরম ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করছে ছোট ছোট লঞ্চগুলো।
এ অঞ্চলের যাত্রীদের দাবি ছিল এ রুটে বড় লঞ্চ চলাচলের। কিন্তু কোকো ট্র্যাজেডির ৬ বছরেও পূরণ হয়নি সে দাবি।
অপরদিকে, গত কয়েক বছর দিবসটি স্মরণে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দোয়া, মোনাজাত ও স্মরণসভার আয়োজন করা হতো। কিন্তু এ বছর নেই কোনো আয়োজন। এতে স্বজনহারা পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এসআর