ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শামুক-ঝিনুকে গড়া স্বপ্নকথন

আসাদ জামান ও ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপেন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
শামুক-ঝিনুকে গড়া স্বপ্নকথন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: মা-বাবা ও তিন ভাই-বোনকে নিয়ে সাইফুলের সংসার। বয়স ১৭।

শামুক-ঝিনুকের তৈরি নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বিক্রি করেন। জীবনের সব স্বপ্নও তাই এই শামুক-ঝিনুক কেন্দ্র করেই।

সাইফুলের স্বপ্ন সংসারের অভাব মিটিয়ে ভাই-বোনদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করা। কিন্তু অভাব আর সংসারের নানান টানাপোড়েনে সাধ থাকলেও সাধ্য হয় না অনেক কিছুর। শামুক-ঝিনুকের তৈরি পণ্যের দোকানের ওপর নির্ভর করেই সাধ সাধ্যের সমন্বয় করতে হয় সাইফুলকে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দোকানটি মূলত আমার মা ফাতেমার। আমি আর মামা বেচাকেনা করি। এ থেকে আয়ের টাকাতেই আমাদের ও মামার সংসার চলে। আমরা ছোট দুই বোন ও ভাই স্কুলে পড়ে।

তিনি বলেন, যেদিন দোকানে বেচাকেনা ভালো হয়, সেদিন আমাদের রাতের খাবার ভালো হয়। কোনো কোনো দিন মাংস পোলাও হয়। আর যেদিন বেচাকেনা থাকে না সেদিন কোনো রকম ডাল-ভাত জোটে। তারপর আমার তিন ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ জমাতে হয়।

যাইহোক ভাই-বোনদের পড়ালেখার বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় সাইফুল। অর্থের অভাবে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছাড়তে হয় সাইফুলকে। তাই পড়ালেখা ছাড়ার কষ্ট বেশ ভালো করেই জানে। একই কষ্ট ছোট ভাই-বোনরাও যেনো না পায় সে চেষ্টা তার। এজন্যই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শামুক-ঝিনুকের তৈরি ঝাড়বাতি, পুতুল, দুল, মালাসহ নানা পণ্য বিক্রি করেন সাইফুল।

মা ফাতেমার দোকানটি বড় করাই শুধু সাইফুলের স্বপ্ন নয়, বরং কক্সবাজারে তৈরি এসব শামুক ঝিনুক ঢাকায় এনে বিক্রি করে শো-রুম দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। বলেন, ছোট দোকান দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই দোকানটিকে আমি শোরুমে রূপান্তরিত করতে চাই। যার একটি শাখা রাখতে চাই আমি ঢাকায়।

স্বপ্নতো অনেক কিছুই থাকে- বলেই হেসে ওঠেন সাইফুল।

সাইফুলের মতো এমন আরও কয়েকশো শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা রয়েছেন কক্সবাজারে, যাদের সব স্বপ্ন শামুক-ঝিনুক কেন্দ্র করে।

অন্য এক বিক্রেতা ছোট্ট তারেক। শামুকের তৈরি লম্বা চেইন হাতে নিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টে হেঁটে বেড়ায় সারাদিন। পর্যটকদের কাছে একেকটি সেট ২শ টাকা থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি করে তারেক। দিনে তিন-চারটি সেট বিক্রি করতে পারে সে।

এভাবেই জীবনের স্বপ্নগুলো শামুক-ঝিনুককে নিয়েই তৈরি করেন সাগরপাড়ের মানুষজন। এখনো শামুক-ঝিনুকের উপর খোদাই করে নাম লেখাতে ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা খরচ পড়বে পর্যটকদের। ঝিনুকের মালার দাম পড়বে ৪০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা। ঝিনুকের পুতুলের দাম পড়বে একশ টাকা থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত। তবে ঝাড়বাতির দাম কিছুটা বেশি। ৬শ টাকা থেকে শুধু করে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয় শামুক-ঝিনুকের তৈরি ঝাড়বাতিগুলো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এজেড/ইউএম/এএ

** সমুদ্র পাড়ের নীল জ্যোৎস্নায় অবগাহন
** আকাশে উড়লো ইউএস বাংলার সাফল্যের ফানুস
** সূর্যের সঙ্গে মেঘের মিতালি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।