শিবগঞ্জের (বগুড়া) হরিপুর থেকে: মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০)। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (২৬ন ভেম্বর) রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মোয়াজ্জেম হোসেন।
এদিকে, বৃদ্ধ বাবার মৃত্যুতে একমাত্র ছেলে সাহাজুল প্রামাণিক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বোন সাজেদা খাতুনের অবস্থাও একই। আর স্বামী হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা কমেলা বিবি। বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন।
নিহত মোয়াজ্জেম হোসেনের পরিবারের সদস্যদের বুকফাঁটা কান্নায় হরিপুর গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সবমিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে গিয়ে এ করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বামী হারিয়ে স্ত্রী কমেলা বিবি বাড়ির বারান্দায় বসে বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। আর নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাকে ঘিরে রয়েছেন। কমেলার সেই বুকফাঁটা আজাহারিতে স্বজন ও প্রতিবেশিরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তাদের চোখ বেয়েও নিরবে জল ঝরছে।
অপরদিকে পাশেই ছেলে সাহাজুল একটি ঘরের মাঝে বাকরুদ্ধ হয়ে শুয়ে ছিলেন। কেবল মাঝে মধ্যে শোয়া থেকে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন। পরে কারো কাঁধে ভর করে ঘরের বাইরে আসেন। কিন্তু ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না।
নিহতের ভাইয়ের মেয়ের জামাই কামরুজ্জামান, ভাতিজা রুবেল ইসলাম, শামীম ইসলাম, আলাল, হেলালসহ একাধিক স্বজন বাংলানিউজকে জানান, মোয়াজ্জেম হোসেনরা চার ভাই ছিলেন। তিনিই ছিলেন সবার ছোট। শিয়া সম্প্রদায়ের এ মসজিদটিতে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তার ভাইদের মধ্যে আব্দুল মজিদ প্রামাণিক ও বকস মিয়া অনেক আগেই মারা গেছেন। হবিবর রহমান নামের এক ভাই জীবিত আছেন।
নিহতের স্বজনরা বাংলানিউজকে জানান, প্রায় দুই যুগ আগে শিয়া সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত হন নিহত মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে তিনি ও তার পরিবার ছাড়া বংশের সবাই সুন্নি সম্প্রদায়ে সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কারো মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে যে যার রীতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করে আসছিলেন।
শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী মাহফেজ বাংলানিউজকে জানান, হরিপুর, চককানু, গোপিনাথপুর, চল্লিশছত্র, রামকান্দি ও আলাদপুর গ্রামের প্রায় ১১০ ঘর শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। এছাড়া সবাই সুন্নি সম্প্রদায়ের অনুসারী। কিন্তু তাদের কখনও কোনো বিরোধ দেখা দেয়নি। তাই তাকে (মোয়াজ্জেম হোসেন) মেরে ফেলার কোনো কারণ বুঝতে পারছেন না বলে জানান তারা।
কিচক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছার আলী বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় একটি মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে মোয়াজ্জেম হোসেন নামে একজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও তিনজন। এদের মধ্যে দু’জনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজনকে ভর্তি করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আনোয়ার (৪৮) ও জুয়েল (২৫) নামে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে আটক করে। বর্তমানে তাদের শিবগঞ্জ পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এমবিএইচ/জেডএস